ঘুমোও ইশরাত আপা, কাঁদো জন্মভূমি

নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে তখন গমগম করছে আমার দেশের জাতীয়-সঙ্গীত। আমি সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলাচ্ছি। তখনও অনেকেই সে-ভাবে জানেন না, ঢাকায় কী চলছে।

Advertisement

জয়া আহসান

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৯
Share:

নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে তখন গমগম করছে আমার দেশের জাতীয়-সঙ্গীত। আমি সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলাচ্ছি। তখনও অনেকেই সে-ভাবে জানেন না, ঢাকায় কী চলছে। আমাকে দেখেও বাইরে থেকে হয়তো কিছু বোঝার জো নেই। কিন্তু আমার ভেতরটা ফালা-ফালা হয়ে যাচ্ছে। আমি যে তত ক্ষণে খবর পেয়েছি, গুলশনের বেকারিতে ঢুকে জঙ্গিরা সবাইকে জিম্মি করে রেখেছে!

Advertisement

নর্থ অ্যাটলান্টিক বেঙ্গলি কনফারেন্স-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল শুক্রবার। মার্কিন সময় সন্ধে ছ’টা-সাড়ে ছ’টা হবে। তার মানে ভারত-বাংলাদেশে তত ক্ষণে শনিবার সকাল হব-হব। আমার শরীরটা কেমন অসাড় মনে হচ্ছে। সবুজ পতাকার উদিত লাল সূর্যের মধ্যে কেমন যেন কালো-কালো দাগ দেখছি। গান হচ্ছে, ‘...মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়নজলে ভাসি’...আর থাকতে পারলাম না। আমারও দু’চোখ বেয়ে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা উপচে পড়ল।

কাজের জন্য এখন কলকাতা, ঢাকা— দু’টোই আমার ঘর-বাড়ি। কিন্তু মন পড়ে থাকে ছোটবেলার শহরে। গুলশনের এই ক্যাফেয় আমি কত বার গিয়েছি, কত সুন্দর সময় কাটিয়েছি! ওই তল্লাটের খুব কাছেই আমার ভাই থাকে। অবশ্য ঢাকা জুড়ে সকলেই তো আমার ভাই।

Advertisement

খানিক ক্ষণ বাদে ইশরাত আপা-র খবরটা পেলাম। ইশরাত আখন্দকে ওরা মেরে ফেলেছে। আমরা একই জায়গায় আঁকা শিখেছি ছোটবেলায়। এক সঙ্গে হাতে তুলি ধরতে, রং দিতে শেখা। কী আশ্চর্য প্রাণবন্ত মানুষ। আর ওঁর সঙ্গে আর দেখা হবে না? ভাবতে পারছি না। ইদের সকালে এখান থেকে সোজা ঢাকায় ফিরব বলে কত আগে থেকে সব ঠিক করে রেখেছিলাম। আমার ভালবাসার দেশ, জন্মভূমির ক্ষত না-সারলে আর কি ইদের সেই খুশি ফিরে পাব!

শুক্রবারই ছিল আমার জন্মদিন। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘রাজকাহিনি’র জন্য সেরা সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার নিতে একটু বাদেই আমার মঞ্চে ওঠার কথা। উঠেওছিলাম, কয়েক মুহূর্তের জন্য। কিন্তু সারা দিন আর কোনও অনুষ্ঠানে থাকতে পারিনি। জন্মদিনের সব রং মুহূর্তে কালো! জঙ্গিরা আমার জন্মদিনের স্বাদটা চিরদিনের জন্য নষ্ট করে দিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement