প্রতীকী ছবি।
হোয়াটসঅ্যাপে আড়ি পাতা নিয়ে ইজ়রায়েলি সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা এনএসও-র পরে এ বার দায় এড়াতে চাইল ইজ়রায়েলের সরকারও। আজ সে দেশের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী জ়িভ এলকিন এক রেডিয়ো সাক্ষাৎকারে দাবি করলেন, ‘‘এনএসও নেহাতই একটি বেসরকারি সংস্থা। এই সংস্থাটি যদি স্পাইওয়্যার ছড়িয়ে তথ্য হাতানোর চেষ্টা করেও থাকে, তার সঙ্গে ইজ়রায়েলি সরকার কোনও ভাবেই জড়িত নয়।’’
ভারতের এক গুচ্ছ সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী, কূটনীতিক, সরকারি কর্তা ও রাজনীতিকের উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে এক সপ্তাহ ধরে সতর্ক করে আসছে হোয়াটসঅ্যাপ। শুধু ভারত নয়, ২৯ এপ্রিল থেকে ১০ মে-র মধ্যে চারটি মহাদেশের ১৪০০ গ্রাহকের ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগে গত মঙ্গলবারই এনএসও-র বিরুদ্ধে মামলা করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। ৭৫ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছে তারা। যদিও এনএসও গোড়া থেকেই বলে আসছে, সরকারি বরাত ছাড়া বেআইনি ভাবে তারা কারও ফোনে আড়ি পাতে না।
ভারতে আড়ি পাতার নির্দেশ কি তা-হলে দিল্লিই দিয়েছিল? কেন্দ্রীয় তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রক সব দায় হোয়াটসঅ্যাপের ঘাড়ে চাপাতে চাইলেও সুর চড়াচ্ছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা আজও টুইটারে বলেন, ‘‘সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, রাজনীতিকদের ফোনে আড়ি পাতার ক্ষেত্রে বিজেপি কিংবা কেন্দ্র যদি কোনও ভাবে ইজ়রায়েলি ওই সংস্থাকে বরাত দিয়ে থাকে, তা নিশ্চিত ভাবেই ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন। এই দুর্নীতি দেশের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও ভয়ঙ্কর। এখন সরকার কী বলে, সেটাই শোনার।’’
এনএসও কেন ভীমা কোরাগাঁও মামলার আইনজীবীদের ফোনে আড়ি পাতবে, গত কালই সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যদিও বিরোধীদের সব অভিযোগকেই ‘সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা’ বলে দাবি করেছে, দেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কেন্দ্রের ‘উদ্বেগ’ যথাযথ বলে আজ ফের ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে কড়া পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছেন হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। মার্ক জ়াকারবার্গের সংস্থাটির দাবি, এনএসও গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতানোর চেষ্টা করলেও, তা সফল হয়নি। যাবতীয় অভিযোগ এবং নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষায় হোয়াটসঅ্যাপ কী পদক্ষেপ করেছে, ৪ নভেম্বরের মধ্যে তার জবাবদিহি চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষায় সরকারি উদ্যোগের প্রশংসা করলেও, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদৌ তারা কেন্দ্রকে কোনও জবাব দেবে কি না, তা নিশ্চিত করেনি হোয়াটসঅ্যাপ।
হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিয়ো কলের সময়ে ‘পেগেসাস’ স্পাইওয়্যার বসিয়ে তথ্য হাতানোর চেষ্টা অবশ্য নতুন কিছু নয়। হোয়াটসঅ্যাপেরই তদন্তকারী দলের দাবি, চলতি বছরের গোড়া থেকে পাঁচটি মহাদেশের অন্তত ২০টি দেশের উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, সেনা অফিসারদের নিশানা করা হয়েছিল। দেশগুলির মধ্যে ভারত ছাড়াও রয়েছে আমেরিকা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, বাহারাইন, মেক্সিকো, পাকিস্তান। ভারতের অভিযোগ, এই ‘পেগেসাস’ স্পাইওয়্যার নিয়ে এক বারের জন্যও সতর্ক করেনি হোয়াটসঅ্যাপ। মে মাসে শুধু প্রযুক্তিগত বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। কারা এই বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের ফোনে আড়ি পাতার চেষ্টা করেছিল, তা-ও স্পষ্ট নয়। যদিও ইজ়রায়েলি সংস্থা এনএসও-র দাবি, স্পাইওয়্যার তারা শুধু কোনও দেশের সরকারকেই বিক্রি করে।