জঙ্গি: পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া সেফুল্লো-র ফাইল ছবি।
আইএস জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রতি নিউ ইয়র্কের ঘাতক ট্রাকচালক সেফুল্লো হাবিবুলেভিক সাইপভের আনুগত্য দেখে রীতিমতো স্তম্ভিত তদন্তকারীরা। হাসপাতালের ঘরেও আইএসের পতাকা লাগাতে চেয়েছে সে! সাইপভকে জেরা করে আরও অনেক তথ্যই জানতে পেরেছেন তাঁরা।
মঙ্গলবার ট্রাক নিয়ে নিউ ইয়র্কের পথে ত্রাস ছড়ানো এই জঙ্গিকে কোনও রকম ‘ছাড়’ দিতে নারাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার রাতেই তিনি এক টুইটে বলেছেন, ‘‘লোকটা বেশ খোশমেজাজেই আছে। আর হাসপাতালের ঘরে আইএসের পতাকা চাইছে। আট জনকে মেরেছে। ১২ জনকে গুরুতর ভাবে জখম করেছে। ওর মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত।’’
মঙ্গলবারের হামলার পরে পেটে গুলি লাগায় সেফুল্লোকে হাসপাতালে রাখা হয়েছিল। হুইলচেয়ারে এ দিন কোর্টে হাজিরা দেয় সে। আদালতে সে ভাবে কিছু বলতে না চাইলেও হাসপাতালে তদন্তকারীদের সামনে বিশদেই মুখ খুলেছে সাইপভ। তখনই বলেছে, হাসপাতালের ঘরে আইএসের একটা পতাকা লাগাতে চায় সে। তার হাবেভাবে তদন্তকারীদের মনে হয়েছে, হত্যাকাণ্ড চালিয়ে বেশ খুশি সেফুল্লো। ঘাতক ট্রাকের আগে-পিছেও আইএসের পতাকা লাগাবে বলে ভেবেছিল সে, কিন্তু দ্রুত নজরে পড়ার আশঙ্কায় সেই ভাবনা বাদ দেয়। কী ভাবে সে এই হামলার পরিকল্পনা করল, ভবিষ্যতে সে আর কী কী ছক কষেছিল, সবই জানিয়েছে সে। নিউ ইয়র্ক পুলিশ এবং এফবিআই সেফুল্লোর মোবাইল ঘেঁটে দেখেছে, অন্তত ৯০টি ভিডিও ও ৩৮০০ ছবি রয়েছে তাতে। বেশির ভাগই আইএস-এর প্রচারধর্মী ভিডিও। ছবিগুলোর কোনওটায় আইএস জঙ্গিরা নিরপরাধ মানুষের গলা কাটছে। কোথাও বোমা বানানোর প্রক্রিয়ার কথা বলা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণায় ফের চিনের বাধা
জেরা থেকে যে ছবি উঠে এসেছে, তাতে এটা স্পষ্ট, নিউ ইয়র্কের ওয়েস্ট স্ট্রিট ছাড়াও আরও নানা জায়গায় হত্যালীলা চালানোর ছক ছিল সেফুল্লোর। হ্যালোইনের মধ্যে হামলা চালানোটাও খুব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ উৎসবের মধ্যে রাস্তায় বেশি লোকজনকে পাওয়া যাবে, তাই ট্রাক-হামলায় নিহতের সংখ্যা বাড়াতে এমন দিনই বেছেছিল সেফুল্লো। ৯/১১-র পরে আরও একটি বেনজির হামলা চালিয়ে সবাইকে চমকে দিতে চেয়েছিল সে।
হাসপাতালে তদন্তকারীদের কাছে সেফুল্লো জানিয়েছে, পাক্কা এক বছর ধরে নিউ ইয়র্কে হামলার পরিকল্পনা চালিয়েছে সে। কিন্তু ট্রাক নিয়ে হামলার সিদ্ধান্ত নেয় মাস দু’য়েক আগে। ২২ অক্টোবর নিউ জার্সির পাসায়েকের হোম ডিপো থেকে একটি ট্রাক ভাড়া নেয় সে। হামলার আগে ওই ট্রাক চালিয়েই মহড়া দিয়েছিল সেফুল্লো। মঙ্গলবারও একই ভাবে দু’ঘণ্টার জন্য ট্রাক ভাড়া নেয়। তবে তদন্তকারীদের দাবি, সেই ট্রাক ফেরত দেওয়ার কোনও ইচ্ছে লোকটির ছিল না। যে সাইকেল পাথ-এ সে ওই দিন হামলা চালিয়েছে, সেখান থেকে ব্রুকলিন ব্রিজ-এর দিকে চলে যাওয়ার কথা ভেবেছিল সেফুল্লো। লক্ষ্য ছিল, পথে আরও লোককে মারতে মারতে এগিয়ে যাওয়া।
হামলার ঘটনা নিয়ে আইএস গোষ্ঠীর তরফে সে ভাবে কেউ দায় নেয়নি। সেফুল্লো নিজেই তদন্তকারীদের বলেছে, ওই গোষ্ঠীর থেকে অনুপ্রাণিত সে। আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদির একটি ভিডিওর কথা উল্লেখ করেছে সে। যাতে বাগদাদি প্রশ্ন করছেন, ‘‘ইরাকে মুসলিম হত্যার প্রতিশোধ নিতে আমেরিকা ও অন্যান্য জায়গার মুসলিমরা কী করছে?’’
সব শুনে আইএসের এত বড় ‘ভক্ত’কে প্রথমে ‘পশু’ সম্বোধন করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁকে গুয়ান্তানামো বে-তে ছুড়ে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। তার পরেই মৃত্যুদণ্ডের কথা বলেছেন তিনি।