রেজাউল করিম সিদ্দিকি
বাংলাদেশে চার চার জন মুক্তমনা ব্লগার খুন হয়েছিলেন গত বছর। আজ সকালে কর্মস্থানে যাওয়ার পথে প্রায় একই কায়দায় খুন হলেন রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকি। তিনিও মুক্তমনা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রাজশাহি শহরের শালবাগান এলাকায় অধ্যাপকের বাড়ির কাছেই তাঁকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে যায় দুষ্কৃীতিরা।
রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়াতেন বছর আটান্নর রেজাউল। আজ সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাস ধরতে যাচ্ছিলেন। শালবাগান এলাকার বটতলা মোড়ে পিছন থেকে আক্রমণ করে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। তাঁর ঘাড়ে কোপ বসানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, রেজাউলের ঘাড়ে তিন বার কোপ মারা হয়েছিল। মাটির দিকে মুখ গুঁজে পড়েছিল নিহত অধ্যাপকের দেহ। তাঁর ঘাড় ও গলার আশি শতাংশ অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, আক্রমণের পর একটি মোটরবাইকে চেপে দু’জন দুষ্কৃতীকে পালিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। গত বছর প্রায় একই ভাবে খুন করা হয়েছিল অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, নিলয় নীলের মতো মুক্তমনা ব্লগারদের। এঁরা সকলেই নিজেদের ব্লগে কট্টর ধর্মীয় ভাবাবেগের বিরুদ্ধে লেখার জন্য পরিচিত ছিলেন। কিন্তু অধ্যাপক রেজাউল শুধুই সঙ্গীত চর্চা করতেন। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ছিল না।
অধ্যাপককে এ ভাবে কে বা কারা খুন করেছে তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে রাজশাহির পুলিশ। ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’ নামে একটি মার্কিন সংস্থা টুইটারে দাবি করেছে, ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। রাজশাহির পুলিশ কমিশনার মহম্মদ শামসুদ্দিনও সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘অধ্যাপককে যে কায়দায় হামলা করা হয়েছে, তাতে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের হাত রয়েছে বলেই অনুমান।’’ রেজাউলের সহকর্মীরা জানান, মুক্তমনা এই অধ্যাপক এলাকায় সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, নিহত অধ্যাপক ভাল সেতার আর বাঁশি বাজাতে পারতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সব সময় অংশ নিতেন। কোমলগান্ধার নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি। ছিলেন সুন্দরম নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টাও। শালবাগান এলাকাতেই গানের স্কুলও ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি পরিচিত এই মুখের এ ভাবে হত্যা তাই মেনে নিতে পারছেন না কেউই। আজ খুনের খবর চাউর হওয়ার পর থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। প্রতিবাদ মিছিলের পাশাপাশি ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগকারী রাস্তা অবরোধ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে পড়ুয়া, সকলেরই দাবি, অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক দোষীদের।