যত কাণ্ড নৈশভোজেই!
মুখের উপর ‘না’ বলে জানুয়ারিতে চটিয়েছিলেন প্রেসিডেন্টকে। মাস চারেক পরে ‘পিঙ্ক স্লিপ’ হাতে নিয়ে বুঝি তারই খেসারত দিতে হলো জেমস কোমিকে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এফবিআই ডিরেক্টরের বরখাস্ত হওয়া নিয়ে যখন সারা বিশ্ব তোলপাড়, এক মার্কিন দৈনিকের প্রতিবেদনে ঠিক তখনই উঠে এল চাঞ্চল্যকর সেই নৈশভোজের প্রসঙ্গ।
সংবাদমাধ্যমটির দাবি, হোয়াইট হাউসে আসার ঠিক সাত দিনের মাথায় কোমিকে নেমন্তন্ন করেছিলেন ট্রাম্প। কথা হচ্ছিল খেতে-খেতেই। কিন্তু খাওয়ার টেবিলে খোদ প্রেসিডেন্ট যে এ ভাবে দুম করে তাঁর আনুগত্য চেয়ে বসবেন, আন্দাজও করতে পারেননি গোয়েন্দা-কর্তা। প্রথমটায় তাই খানিক ঘাব়ড়ে গিয়েছিলেন কোমি। পরে অবশ্য জানিয়ে দেন—রাজনৈতিক ভাবে কোনও এক জনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকাটা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। ১০ বছর চাকরির মেয়াদে গোয়েন্দা-প্রধানের নিরপেক্ষ থাকাটাই দস্তুর। কোমিকে সে দিন তিন-তিন বার একই প্রশ্ন করেন ট্রাম্প। আর প্রত্যেক বারই ‘না’ বলেন গোয়েন্দা-প্রধান। তার জেরেই কোমিকে বরখাস্ত হতে হলো কি না, প্রশ্ন উঠছে।
কোমির নির্দেশেই এত দিন সেই আলোচনার কথা চেপে রেখেছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহকর্মী। হোয়াইট হাউস যদিও এমন কোনও আলোচনার কথা স্বীকার করেনি। কিন্তু অন্য একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প নিজেও কোমির সঙ্গে একটি নৈশভোজের কথা উল্লেখ করেছেন। মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে এফবিআই তখন জোরদার তদন্ত চালাচ্ছে। প্রেসিডেন্টের দাবি, তিনি জানতে চেয়েছিলেন, এফবিআই তাঁর বিরুদ্ধেও তদন্ত করছে কি না। না-বাচক উত্তর দিয়ে কোমি যে তাঁকে আশ্বস্ত করেন, তার উল্লেখ রয়েছে ছাঁটাই চিঠিতেও। সে জন্য ট্রাম্প তাঁকে ধন্যবাদ জানাতেও কার্পণ্য করেননি।
কোমির কাছে ট্রাম্পের আনুগত্য দাবির অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ হুকাবে স্যান্ডার্স। তাঁর কথায়, ‘‘প্রেসিডেন্ট নিজের জন্য এ ভাবে কারও কাছে আনুগত্য চাইতেই করতেই পারেন না।’’
‘অযোগ্য’ তকমা দিয়ে কোমিকে ছাঁটতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট নিজেই জানিয়েছিলেন, মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেলের সুপারিশ মেনেই এই সিদ্ধান্ত। গত কাল এ নিয়ে অন্য এক সংবাদমাধ্যমকে অবশ্য প্রেসিডেন্ট খুল্লামখুল্লাই বলেছেন, ‘‘এমন সুপারিশ না হলেও বরখাস্ত করতাম কোমিকে। এটা আমারই সিদ্ধান্ত।’’ হোয়াইট হাউসের মুখপাত্রও জানান, ক্ষমতায় আসার পর-পরই এফবিআই প্রধানকে বরখাস্ত করার কথা ভাবেন ট্রাম্প। কারণ, কোমি ক্রমশ আস্থা হারাচ্ছিলেন প্রেসিডেন্টের।
যদিও একাধিক সূত্রের দাবি, আমেরিকার ভোটে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত প্রায় গুটিয়েই ফেলেছিলেন কোমি। যে সংযোগের কথা আজ ফের ‘বানানো গল্প’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। তাঁর দাবি, ‘‘তদন্তের নামে এ থেকে শুধু ডেমোক্র্যাটরাই সুবিধা নেওয়ার ধান্দা করছে। আর অকারণে বিভ্রান্তি ছ়ড়াচ্ছে মানুষের মধ্যে। এটা হতে দেওয়া যায় না।’’ তাঁর দাবি, দেশ চেয়েছিল বলেই তিনি আজ হোয়াইট হাউসে। আজই আবার সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ নির্বাচনের লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করতে চেয়ে প্রশাসনিক নির্দেশে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট।
তা হলে কি রুশ-যোগের তদন্তে এখানেই ইতি? হোয়াইট হাউসের তরফে তেমন স্পষ্ট ইঙ্গিত অবশ্য এখনও মেলেনি।