ইমান সাবজিকার। ছবি: ইরান হিউম্যান রাইটস-এর টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে সংগৃহীত। ছবি: সংগৃহীত।
পুলিশ আধিকারিককে খুনে দোষী সাব্যস্ত এক ব্যক্তিকে অপরাধস্থলেই জনসমক্ষে ফাঁসি দিল ইরান প্রশাসন। এই ঘটনায় নিন্দার ঝড় তুলেছেন বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা। তাঁদের দাবি, দু’বছরের বেশি সময় পরে এই ‘মধ্যযুগীয় প্রথা’ ফিরে এল ইরানে। অভিযোগ, দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে সরব হওয়ায় বিক্ষোভকারীদের দমাতে এই প্রথা ফিরিয়ে এনেছে সরকার।
গত মাসে ইমান সাবজিকার নামে ওই অপরাধীকে জনসমক্ষে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল ইরানের সুপ্রিম কোর্ট। শনিবার সাতসকালেই সে আদেশ কার্যকর করা হয়। প্রথমে ইমানকে নিয়ে গিয়ে যাওয়া হয় তার অপরাধের জায়গায়। সেখানে একটি অস্থায়ী ফাঁসির মঞ্চে ইমানকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
গোটা ঘটনাটির ভিডিয়ো নেটমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, চোখে কালো পট্টিবাঁধা ওই অপরাধীর পরনে সে দেশের জেলবন্দিদের ফিকে নীল-কালো ডোরাকাটা পোশাক। যে জায়গায় খুন করেছিল ইমান, সেখানে দাঁড় করানো ট্রাকের উপর অস্থায়ী ফাঁসির মঞ্চে ওঠানো হয় তাকে। এর পর একটি ক্রেনের সঙ্গে আটকানো ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার পর প্রায় সাত মিটার পর্যন্ত উঁচুতে ঝুলতে থাকে ইমানের দেহ।
এই ঘটনায় সরব নরওয়ের মানবাধিকার সংগঠন ‘ইরান হিউম্যান রাইটস’ (আইএইচআর)-ও। সংগঠনের ডিরেক্টর মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দমের দাবি, ‘‘আমজনতাকে ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখতেই এই নৃশংস মধ্যযুগীয় শাস্তি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মৃত্যদণ্ডের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে মানুষের আরও প্রতিবাদ করা উচিত, বিশেষ করে জনসমক্ষে ফাঁসির মতো সাজার ক্ষেত্রে।’’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ইরানের খ্যাতনামী চলচ্চিত্রকার জাফর পানাহিকে গ্রেফতার করে ছ’বছরের জন্য জেলে পাঠানো হয়েছে। ইসলামিক গণতান্ত্রিক সরকারের কট্টর সমালোচক হিসাবে পরিচিত পানাহির মতো আরও দুই পরিচালককেও গ্রেফতার করেছে ইরান সরকার। পাশাপাশি, আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত ইরানের বহু প্রতিবাদীও সরকারের রোষানলে পড়েছেন।
আইএইচআর জানিয়েছে, ২০২০-র ১১ জুন ইরানে শেষ বার জনসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকে জেলের ভিতরেই অপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করা হত। শনিবারের পর আবারও সেই প্রথা ফিরে এল বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি, পুলিশ আধিকারিককে খুনের অন্য একটি ঘটনায় ফাঁসির সাজা পাওয়া চার ব্যক্তিরও ইমানের মতো হাল হবে বলে দাবি আইএইচআর-এর।