মারাত্মক সন্ত্রাস চালাতে প্রয়োজন প্রচুর অর্থের। যাদের নাগালই নাকি পায় না অন্য কেউ, তারা কী ভাবে সন্ত্রাস চালানোর জন্য বিপুল অঙ্কের টাকা জোগাড় করছে, এটা একটা বড় প্রশ্ন।
পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ ই মহম্মদ কাশ্মীর-সহ গোটা উপত্যকা জুড়ে জাল বিস্তার করার চেষ্টা করছে। সেনা সূত্রে দাবি, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জইশ কমান্ডার মুফতি আসগরই জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাস ছড়ানোর মূল পাণ্ডা। হাওয়ালা চ্যানেল দিয়ে টাকা আনে জইশরা।
এর জন্য যে নাগরিকদের আত্মীয়-পরিজনরা দেশের বাইরে থাকেন, বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়ার কোনও দেশে, তাঁদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করা হয়।
সেই আত্মীয়ের ঠিকানা ও অ্যাকাউন্ট নম্বরও জেনে নেওয়া হয়। হাওয়ালার মাধ্যমে ওই ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে টাকা আসে। অল্প অল্প করে সেই অ্যাকাউন্ট থেকে জঙ্গিদের মধ্যে টাকা সরবরাহ করা হয়। নইলে নানারকম হুমকিও দেওয়া হয়। এ ছাড়াও জঙ্গিরা আরব দুনিয়ার ‘বন্ধু’-দের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। সেখান থেকেও আসে বিপুল টাকা।
ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কারদের মাধ্যমে মাঝে মাঝে সাহায্যকারী ব্যক্তিদের কমিশনও দেওয়া হয়। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, শ্রীনগর-মুজফফরাবাদ-তিতওয়াল রুটে এ ভাবে চালানো হয় কার্যকলাপ।
মাসুদ আজহার থাকে পাকিস্তানে। জইশের মূল মাথা সে হলেও তার ভাই, শ্যালক, মুফতি আসগর-সহ আরও দু’জনও রয়েছেন এ জাতীয় সন্ত্রাসের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, হরিপুর ও বাহাওয়ালপুরের ঘাঁটিতে বছর দু’বার সেমিনারও করে তারা।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নামে, স্থানীয় ট্রাস্টের নামেও টাকা তোলা হয়। পারিবারিক ব্যবসার টাকাও লাগানো হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘চেন’ চালায় তারা। বিভিন্ন নামে যেখানে জেহাদি হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়।
মুজফফরাবাদে একটি হাসপাতাল রয়েছে, যার মালিক আসলে মাসুদ নিজেই। জইশ গোষ্ঠীতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বারবার নাম পাল্টে রসদ জোগাড় করতে থাকে তারা।
তালিবানদের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে টাকা জোগাড় হয় আফগানিস্তান থেকেও। পঞ্জাব ও সিন্ধ প্রদেশে বেশ কিছু অল্পবয়সিদের মধ্যে ‘দাওয়াত’ দিয়ে বন্ধুত্ব পাতায় এঁরা। এর পর পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দুধনিয়াল, পুঞ্চ, মুররে, শিয়ালকোট এলাকায় অল্পবয়সিদের সঙ্গে জঙ্গি কার্যকলাপে লাগানো হয় তাঁদের, জানিয়েছে গোয়েন্দাদের একটি সূত্র।
১৫ থেকে ১৮ বছরের অল্পবয়সি কিশোরদের ‘টার্গেট’ করে জঙ্গিরা। মূলত আধা মফস্বল এলাকাকেই বেছে নেয় তারা। কারণ এখানে কর্মসংস্থান প্রায় নেই। সহজেই যে কোনও উপায়ে অর্থ রোজগার করতে চায় এখানকার কিশোররাও। মাসুদের বুদ্ধিতেই ভারতে সংখ্যালঘুদের অবস্থান নিয়ে জঙ্গিরা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দেয় কিশোরদের মধ্যে, জানিয়েছে প্রতিরক্ষা দফতরের একটি সূত্র।
কোড বাবর, আবু আয়ুবি নাদিহাল, ফারাদ (পাকিস্তানের নাগরিক), ইকরাম ভাই, মহম্মদ আলতাফ বাবা, সাবির আহমেদ কাল্লাস-সহ আরও বেশ কয়েকজন জইশ জঙ্গিরা উপত্যকায় এই কার্যকলাপ ছড়াতে সাহায্য করছে, এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ সূত্র। (প্রতীকী ছবি)
ব্রাসেলসের ইন্টারন্যাশলান ক্রাইসিস গ্রুপ জানায়, পাক পঞ্জাবের রাজানপুর, সিন্ধের কাশ্মোর, বালোচিস্তানের ডেরা বুগতি ‘জঙ্গিদের অভয়ারণ্য’। সিন্ধু নদের তিনটি দ্বীপ রয়েছে, এই দুর্গম নদীখাতের আশপাশেই হাজারেরও বেশি সন্ত্রাসবাদী নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।