কিষণগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত।
জল নিয়ে প্রবল আতঙ্কে পাকিস্তান। জম্মু-কাশ্মীরে দু’টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করছে ভারত। কিষণগঙ্গা এবং রতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হচ্ছে বিতস্তা (ঝিলম) এবং চন্দ্রভাগার (চেনাব) উপরে। এই দুই প্রকল্পই গভীর চিন্তায় ফেলে দিয়েছে পাকিস্তানকে। পঞ্জাব এবং সিন্ধ প্রদেশের বিরাট এলাকা শুকিয়ে যেতে পারে ভারতের এই প্রকল্পের কারণে। এমনই আশঙ্কা ইসলামাবাদের। তাই পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির দু’টি কমিটি যৌথ সিদ্ধান্ত পাশ করিয়ে অবিলম্বে ওই দুই প্রকল্প বন্ধ করতে বলেছে ভারতকে।
সিন্ধু জল চুক্তি অনুযায়ী বিতস্তা এবং চন্দ্রভাগার জলের উপর পাকিস্তানের অধিকার ৮০ শতাংশ, ভারতের অধিকার ২০ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় এই চুক্তি হয়েছিল। এই নদ-নদীগুলির জল ভারত ব্যবহার করতে পারবে কিন্তু আটকাতে পারবে না, এমনই শর্ত সে চুক্তির। সেই শর্ত তুলে ধরে কিষণগঙ্গা এবং রতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ঘোর বিরোধিতা শুরু করল পাকিস্তান। নওয়াজ শরিফ সরকারের আশঙ্কা, জলবিদ্যুৎ তৈরি করা ভারতের আসল উদ্দেশ্য নয়, আসলে জল আটকে পাকিস্তানকে জব্দ করতে চাইছে ভারত।
উরির সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, সিন্ধু জল চুক্তি ভেঙে দেবে ভারত। তার পরই বিতস্তা ও চন্দ্রভাগার উপর দু’টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির প্রস্তুতি দ্রুত এগোতে শুরু করেছে। এই দু’টি প্রকল্পেই অবশ্য শেষ নয়। সিন্ধু, বিতস্তা এবং ঝিলমের উপর মোট ৪৫টি থেকে ৬০টি বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত। এতেই আতঙ্কিত ইসলামাবাদ। অবিলম্বে বিশ্ব ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছে তারা।
পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি এবং জলসম্পদ ও শক্তি কমিটি বৈঠক করে যৌথ ভাবে একটি সিদ্ধান্ত পাশ করিয়েছে। ভারতকে রীতিমতো হুঁশিয়ারিই দিয়েছে ওই দুই কমিটি। আন্তর্জাতিক চুক্তিকে সম্মান জানিয়ে বিতস্তা এবং চন্দ্রভাগার উপর কিষণগঙ্গা এবং রতলে প্রকল্পের কাজ অবিলম্বে বন্ধ করুক ভারত। নয়াদিল্লিকে এমনই বার্তা দিয়েছে পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি। বলাই বাহুল্য, কোনও প্রকল্পের কাজই ভারত বন্ধ করছে না। ভবিষ্যতে যে প্রকল্পগুলি গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে, সেগুলির প্রক্রিয়াও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে নয়াদিল্লি সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: ভারতীয় সেনা অগ্রসর হলে ‘সব অস্ত্র’ প্রয়োগ করব: হুমকি পাক সেনাকর্তার
রক্ত এবং জল এক সঙ্গে বইতে পারে না বলে যে দিন মন্তব্য করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী, সে দিন থেকেই আতঙ্কে রয়েছে পাকিস্তান। ভারত থেকে পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত ছ’টি নদীর মধ্যে যে তিনটি নদীর উপর পাকিস্তানের অধিকার স্বীকৃত, সেই তিন নদীর জল যে আর অবাধে পাকিস্তানে ঢুকবে না, মোদী সেই ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন। সিন্ধু, বিতস্তা এবং চেনাবের প্রবাহ যদি সত্যিই আটকে দেয় ভারত, তা হলে পাকিস্তানের কৃষিকাজ ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। জল এবং বিদ্যুতের সঙ্কটও মারাত্মক আকার নেবে। তাই মোদীর হমকির পর থেকে বিশ্ব ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপ দাবি করতে শুরু করেছে ইসলামাবাদ।
পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির দুই কমিটিকে সে দেশের বিদেশ সচিব এজাজ চৌধুরি বলেছেন, ‘‘আমরা ভারতকে কিছুতেই চুক্তি ভাঙতে দেব না।’’ ইতিমধ্যেই পাকিস্তান বিশ্ব ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপ চেয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন নিজের দেশের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিকে। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী আদালত গঠন করে বিতস্তা, চন্দ্রভাগা ও সিন্ধুর উপর ভারতের সমস্ত প্রকল্পের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক, বিশ্ব ব্যাঙ্কের কাছে এমনই দাবি জানিয়েছে পাকিস্তান। ভারত ইচ্ছাকৃত বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখছে এবং সেই ফাঁকে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে ইসলামাবাদের অভিযোগ।