ছবি: রয়টার্স।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আজ সংসদে সরব হলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এক দিকে জানালেন, এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপই করা হোক, তা করা হবে ‘জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে’। পাশাপাশি অবিলম্বে হিংসা বন্ধের আর্জি জানিয়ে দুনিয়ার কাছে বার্তা দিলেন, ‘ভৌগোলিক অখণ্ডতা, শান্তি এবং রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ’ রাখার পক্ষে ভারত। ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে ভারত-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে যে কোনও প্রভাব পড়বে না, এমন বার্তাও আজ দিয়েছেন জয়শঙ্কর।
এমন নয় যে এই প্রথম এই কথাগুলি বলছে নয়াদিল্লি। রাষ্ট্রপুঞ্জে গত তিন সপ্তাহ ধরে একই ভাবে রাশিয়ার নাম না করে, ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রাখা, আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফেরানোর কথা বলে আসছে ভারত। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, খোলাখুলি রাশিয়া-বিরোধিতার জন্য নয়াদিল্লির উপর আমেরিকা তথা পশ্চিমি দুনিয়ার চাপ ক্রমশ বাড়ছে। তাই সংসদে দাঁড়িয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তির পক্ষে সওয়াল করা জরুরি ভারতের জন্য।
এরই মধ্যে গতকাল রাষ্ট্রপুঞ্জে রাশিয়ার আনা একটি খসড়া প্রস্তাবেও ভোটদানে বিরত থেকেছে নয়াদিল্লি। শুধু ভারতই নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের মোট ১২টি দেশ ইউক্রেনবাসীর সঙ্কট নিয়ে আনা মস্কোর প্রস্তাবে ভোটদানে শামিল হয়নি। রাশিয়ার সঙ্গে থেকেছে সিরিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং বেলারুস। তাৎপর্যপূর্ণভাবে চিন এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। তাদের আনা প্রস্তাবে ইউক্রেনের উপর আক্রমণ নিয়ে একটি শব্দও নেই। সেখানে কেবল বলা হয়েছে, ইউক্রেনে বসবাসকারী মানুষদের যেন নিরাপদে দেশের বাইরে যাওয়ার পথ করে দেওয়া হয়। মানবিক সাহায্য যেন দেওয়া হয়। আমেরিকা-সহ পশ্চিমের বেশ কিছু দেশের মতামত, রাশিয়ার সে দেশের মানুষের অসহায়তা নিয়ে কোনও চিন্তাই নেই। তা যদি থাকত, তা হলে তারা অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করত।
বিদেশমন্ত্রী আজ রাজ্যসভায় একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, “আমরা আমাদের নীতির প্রশ্নে সুদৃঢ। এটাই ভারত বিশ্বাস করে যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় অবশ্যই ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন।” কেরলের কংগ্রেস সাংসদ কে মণির প্রশ্নের লিখিত জবাবে বিদেশমন্ত্রী বলেন, “ইউক্রেন পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ভারতের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। ভারত চায়, অবিলম্বে সংঘর্ষ বিরতি হোক।” সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, রাশিয়ার যুদ্ধে প্রশ্নে ভারতের অবস্থান নড়বড়ে। এই যুদ্ধের প্রভাব কি ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য সম্পর্কে পড়বে না? জয়শঙ্করের জবাব, “বাণিজ্যের সঙ্গে ইউক্রেন পরিস্থিতিকে সংযুক্ত করার কোনও প্রশ্নই উঠছে না।” তাঁর কথায়, “ইউক্রেন নিয়ে আমাদের অবস্থান ছ’টি নীতির উপর দাঁড়িয়ে। প্রথমত, আমরা অবিলম্বে সমস্ত ধরনের হিংসা বন্ধের ডাক দিয়েছি। আমরা শান্তির পক্ষে। দুই, আমরা বিশ্বাস করি, সংলাপ এবং কূটনীতির পথে ফেরা ছাড়া রাস্তা নেই। তিন, আমাদের বিশ্বাস বিশ্বব্যবস্থা দাঁড়িয়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক আইন, রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ, রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্বের উপর। চার, সংঘর্ষ স্থলে মানবিক সাহায্য পৌঁছনোর ডাক দিয়েছি আমরা। পাঁচ, আমরা নিজেরা মানবিক সাহায্য পাঠাচ্ছি। ছয়, এ ব্যাপারে আমরা ইউক্রেন এবং রাশিয়া— উভয়পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছি।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন এর আগে। বিষয়টিকে ভারতের ‘ভারসাম্যের দৌত্য’ হিসাবে একাধিক বার তুলে ধরে নয়াদিল্লি দেখাতে চেয়েছে, শান্তি ফেরানোর জন্য ভারতের প্রয়াস কিছু কম নয়। রাজ্যসভায় লিখিত জবাবে জয়শঙ্কর আজও বলেছেন, “ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে কথাবার্তা কী ভাবে চলছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন সে কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী রাশিয়া এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মধ্যে সরাসরি কথারও প্রস্তাব দিয়েছেন।”