ফাইল চিত্র।
শুধু অক্টোবর মাসেই রাশিয়ায় কোভিডে মৃত্যু হয়েছে ৪৪ হাজারের বেশি মানুষের। রুশ সরকার জানিয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই প্রথম এত মৃত্যু। কিন্তু শুধু রাশিয়া নয়, গোটা ইউরোপেই করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহে ৫৩টি দেশের ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ায় আছড়ে পড়বে নয়া সংক্রমণ ঢেউ! এই শীতে আরও অন্তত ৫ লক্ষ প্রাণহানি ঘটতে পারে ইউরোপে।
হু-র ইউরোপ শাখা জানিয়েছে, এ সপ্তাহে কমপক্ষে ১৮ লক্ষ করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যা তার আগের সপ্তাহের থেকে ৬ শতাংশ বেশি। এই এক সপ্তাহে ইউরোপে অন্তত ২৪ হাজার মৃত্যু হয়েছে। এটিও ১২ শতাংশ মৃত্যু বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। জার্মানিতে গত বৃহস্পতিবার এক দিনে ৩৩,৯৪৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যার নিরিখে রাশিয়া বাদে খুব খারাপ পরিস্থিতিতে রোমানিয়া ও ইউক্রেন।
ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে হু-র সদর দফতরে বসে ইউরোপ শাখার প্রধান হান্স ক্লুগ জানান, মহাদেশের একেবারে পশ্চিম থেকে পূর্বে, মধ্য এশিয়া পর্যন্ত ইতিমধ্যেই রেকর্ড সংখ্যক করোনার প্রকোপ বেড়েছে। নতুন করে করোনার ভরকেন্দ্র হয়ে উঠছে ইউরোপ। ঠিক এক বছর আগে ইউরোপ যে পরিস্থিতিতে ছিল, পুনরায় সেই জায়গাতেই ফিরছে বলে
আশঙ্কা হান্সের।
হু-কর্তা বলেন, আগের সঙ্গে এখনের তফাত একটাই— গত বছর এই রোগ অনেকটাই অচেনা ছিল চিকিৎসকদের কাছে। এ বছর তা নয়। বিশেষজ্ঞেরা ভাইরাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
কিন্তু টিকাকরণ শুরু হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এই পরিস্থিতি কেন? এ পর্যন্ত এই অঞ্চলে ৪৭ শতাংশ বাসিন্দার টিকার দু’টি ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে। ৮টি দেশে ৭০ শতাংশ বাসিন্দার টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে। এক সময়ে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছিলেন, ৭০ শতাংশ বাসিন্দার টিকাকরণ হয়ে গেলে গোষ্ঠীর মধ্যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যাবে। তা হলে কী হল! হু-কর্তার বক্তব্য, টিকাকরণের এই হারও যথেষ্ট নয়। কিছু এলাকায় দৈনিক টিকাকরণ এখনও খুব কম। তা ছাড়া, লোকজন করোনা-বিধি একেবারেই মানছেন না। তিনি এ-ও বলেছেন, এ ভাবে চলতে থাকলে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে হয়তো আরও ৫ লক্ষ মৃত্যু দেখতে হবে এই মহাদেশকে।
বিশ্বে এই মুহূর্তে একমাত্র ইউরোপেই এমন অবস্থা। এই নিয়ে পরপর পাঁচ সপ্তাহ সংক্রমণের রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী। হান্সের মতে, করোনা-প্রতিরোধের কৌশল বদলাতে হবে। সংক্রমণ ঘটলে চিকিৎসা নয়, আগেই আটকাতে হবে। কিন্তু তার জন্য তো টিকাকরণ চলছে! এর বেশি ব্যাখ্যা করেননি হান্স। বিশেষজ্ঞেরা বহু দিনই জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস প্যানডেমিক থেকে ক্রমশ এনডেমিকের আকার নেবে। এনডেমিক, অর্থাৎ একটি ভাইরাল অসুখ হিসেবে পৃথিবীতে থেকে যাবে। এর পর থেকেই টিকার পাশাপাশি রোগ নিরাময়ের ওষুধ তৈরিতে নেমে পড়েছে বিভিন্ন সংস্থা। গত কালই মার্ক অ্যান্ড রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিক্স-এর ‘মলনুপিরাভিয়ার’ ওষুধটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে ব্রিটেন। আজ ফাইজ়ার দাবি করল, তারা একটি ওষুধ তৈরি করেছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গিয়েছে এটি কোভিডের বাড়াবাড়ি (হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যুর আশঙ্কা) ৮৯ শতাংশ আটকে দেয়। দুই সংস্থার কেউই অবশ্য ট্রায়ালের তথ্য এখনও জনসমক্ষে আনেনি।