—প্রতীকী চিত্র।
মাঝরাতে মালাবদল! পিএমএল-এন এবং পিপিপি-র জোট সরকার গড়ার সিদ্ধান্তকে ব্যঙ্গ করে এই নামই দিল ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। ইমরানের দল-সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরাই পাকিস্তান জেনারেল অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে সব থেকে বেশি আসন (১০১) পেয়েছেন।
জোট সরকার গঠন করতে পাকিস্তান জেনারেল অ্যাসেম্বলির ২৬৬টি আসনের মধ্যে প্রয়োজন অন্তত ১৩৪টির। পিএমএল-এন (৭৫), পিপিপি (৫৪), মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (১৭) ও আরও কয়েকটি ছোট ছোট দল মিলে তৈরি জোটের মোট আসন সংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু পিটিআই নেতাদের দাবি, জনাদেশ তাঁদের পক্ষে গিয়েছে। তাঁদের থেকে নওয়াজ়-বিলাবলেরা জনাদেশ ‘চুরি’ করেছেন বলেও দাবি করেছেন পিটিআই নেতারা। বিলাবলদের পাল্টা যুক্তি, যে হেতু কোনও দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, যে কোনও দলই সরকার গঠন করতে পারত। কিন্তু পিটিআই সেই পথে এগোয়নি। কোনও গঠনমূলক আলোচনা না চালিয়ে শুধু সমালোচনাই করে গিয়েছে। বিলাবলের কথায়, ‘‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার গঠন করার জন্য আমরা যে কোনও দলের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু পিটিআই কোনও আলোচনাতেই আসেনি।’’
মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ় (পিএমএল-এন)-এর নেতা শাহবাজ় শরিফ এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-র কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলি জ়ারদারিকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন পিপিপি প্রধান বিলাবল ভুট্টো জ়ারদারি। জানান, এই দু’টি দল জোট বেঁধে সরকার গঠন করবে। হাত মেলাবে আরও কয়েকটি দল। তবে পিপিপি বাইরে থেকে সরকারকে সমর্থন করবে, মন্ত্রিত্বে অংশ নেবে না। তবে বিলাবল এ-ও জানান যে তাঁর আশা, অদূর ভবিষ্যতে আসিফ আলি জ়ারদারি দেশের প্রেসিডেন্ট পদের দাবিদার হলে পিএমএল-এন-সহ জোট সরকার তাঁকে সমর্থন করবে।
ভোটের ঠিক আগে বিলাবলের অবস্থানটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয়। তার ঠিক তিন সপ্তাহ আগে, ১৯ জানুয়ারি, একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশের এই রাজনৈতিক ডামাডোল ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য সরাসরি নওয়াজ় শরিফের দলকে দায়ী করেছিলেন বিলাবল। তাঁকে টিভি সঞ্চালক প্রশ্ন করেন, নির্বাচনের পরে সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে শরিফদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পিপিপি কি জোট সরকার গঠন করবে। সঞ্চালকের এই প্রশ্ন শুনে দৃশ্যত চটে গিয়েছিলেন বিলাবল। বলেছিলেন, ‘‘আমাকে প্রথম বার বোকা বানালে দোষ আপনার। কিন্তু পরের বার বোকা বনে গেলে দোষ আমার।’’ সেই বিলাবল ফের শরিফদের সঙ্গে জোট সরকারে যাওয়ায় পিপিপি-র সমালোচনায় মুখর হয়েছে পিটিআই-সহ বিরোধীরা।
বিলাবল আগেই বলেছিলেন, সরকারে যোগ দিলেও কোনও মন্ত্রিত্ব চায় না তাঁর দল। তবে ‘বিনিময়ে’ বাবা আসিফ আলি জ়ারদারিকে তাঁরা যে প্রেসিডেন্ট পদে দেখতে চান, তা-ও স্পষ্ট করে দেন বিলাবল। সূত্রের খবর, শুধু প্রেসিডেন্ট পদ নয়, আরও দু’টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদ ‘দাবি’ করেছেন বিলাবল— অ্যাসেম্বলির স্পিকার এবং সেনেটের চেয়ারম্যান। সূত্রের খবর, এই পদগুলি পিপিপি-র হাতে তুলে দিতে পিএমএল-এন সম্মত হওয়ার পরেই সাংবাদিকদের সামনে জোট সরকার গড়ার কথা ঘোষণা করেন বিলাবল। ভোটের পাঁচ দিন পরেই আসিফ আলি সাংবাদিকদের সামনে জোট সরকার গঠন করার কথা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু গত দু’সপ্তাহ ধরে বিলাবল শুধু বলে আসছেন, আলোচনা চলছে, এখনও কোনও রফাসূত্র বার হয়নি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা পিএমএল-এন এবং পিপিপি-র জোট সরকারকে ‘পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট (পিডিএম), দ্বিতীয় কিস্তি’ নামে উল্লেখ করছেন। ২০২২-এর এপ্রিলে ইমরান খানকে গদিচ্যুত করার পরে বিলাবলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নওয়াজ়ের দল যে জোট সরকার গঠন করেছিল, তার নাম ছিল পিডিএম। শাহবাজ় শরিফ ছিলেন সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী, আর বিলাবল বিদেশমন্ত্রী। ২০২৩-এর অগস্ট পর্যন্ত মোট ১৬ মাস মসনদে ছিল এই জোট সরকার। এই সময়েই চূড়ান্ত অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছিল দেশ। ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছিল। এ বার অবশ্য বিলাবল আশাবাদী, জ়ারদারি-শাহবাজ়ের নেতৃত্বে ‘দেশ জোড়া আগুন নেভাতে’ সফল হবে জোট সরকার। পিপিপি-র এক শীর্ষ নেতা তাজ হায়দার আরও বলেন, ‘‘পিটিআই দরজা বন্ধ করে দিলেও আমরা তা করব না। সবাইকে নিয়েই সরকার চালাতে হবে।’’