আর্জি: আমেরিকায় থাকার আবেদনপত্র পূরণ করছে এক শিশু। ভার্জিনিয়ার এক শরণার্থী শিবিরে। রয়টার্স
বাচ্চাটা এত কাঁদছে। ওকে একটু ঘরের বাইরে নিয়ে যান প্লিজ।
বিচারপতির এই নির্দেশ শুনে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে ছিলেন আইনজীবী লেনি বেনসেন। কিন্তু না-উত্তর দিলেই নয়। তাই বলেই ফেললেন, ‘‘সেটা অসম্ভব, মহামান্য বিচারপতি। বাচ্চাটিই এই মামলার মক্কেল। আপনি এখন একেই জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।’’
এ বার বিচারপতির হতভম্ব হওয়ার পালা। বছর চারেকের একটি মেয়ে, অচেনা জায়গায় এসে তার কান্না থামছেই না। একে জিজ্ঞাসা করেই কি না তাঁকে ঠিক করতে হবে— এ দেশে আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য কি না সে!
‘‘এটা কিন্তু কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়,’’ বললেন আইনজীবী বেনসেন। বেআইনি ভাবে মার্কিন মুলুকে ঢোকার চেষ্টা করছেন যে সব শরণার্থী, সীমান্তেই তাঁদের কাছ থেকে তাঁদের শিশুদের আলাদা করে দেওয়া হচ্ছিল। সম্প্রতি তাঁর এই জ়িরো টলারেন্স নীতি থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এর মধ্যেই কয়েক হাজার শিশু তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। বহু মা-বাবাকে ইতিমধ্যে আমেরিকা থেকে খেদিয়েও দেওয়া হয়েছে। যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের আটক করে রাখা হয়েছে ডিটেনশন সেন্টারে। আর শিশুরা? তারা থাকছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কোনও না কোনও শরণার্থী শিবিরে। যার যখন পালা পড়ছে, হাজিরা দিতে হচ্ছে আদালতে। আমেরিকায় থাকার অধিকার ও যোগ্যতা তার আছে কি না, ঠিক হচ্ছে আদালত কক্ষেই।
সমস্যাটা এখানেই। মার্কিন আইনে বলা নেই যে, শরণার্থী শিশুদের জন্য আইনজীবী দিতে হবে সরকারকে। যদি কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কোনও বাচ্চার জন্য আইনজীবী ঠিক করে, তা হলে আলাদা। না হলে কিন্তু বিচারপতির সামনে একা হাজিরা দিতে হবে বাচ্চাটিকে, সে তার বয়স চোদ্দো হোক বা চার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চাটি ইংরেজি ভাষা বুঝতে পারে না, বলা তো দূরের কথা। স্বয়ংক্রিয় অনুবাদযন্ত্রের সাহায্যে বাচ্চাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন বিচারপতি। কিন্তু অনেক সময়েই তারা ভাল করে উত্তরই দিতে পারে না। যেমন হয়েছিল সে দিন। শরণার্থীদের আইনি সহায়তা দেয়, এমন এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবী লেনি বেনসেন। সে দিন আদালতে এসেছিলেন তাঁর এক শরণার্থী মক্কেলের সঙ্গে। দেখেন, এক বৃদ্ধা বসে রয়েছেন বছর চারেকের একটি মেয়ের সঙ্গে। সমানে কেঁদে চলেছে শিশুটি। লেনি বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে ভোলাতে শুরু করেছিলেন। তখনই তাকে ঘরের বাইরে নিয়ে যেতে বলেন বিচারপতি।
শেষ পর্যন্ত শিশুটি ‘বৈধ শরণার্থীর’ মর্যাদা পেয়েছিল কি না, তা আর জানতে পারেননি লেনি। ‘‘সম্ভবত পায়নি,’’ আক্ষেপ তাঁর। কারণ পরিসংখ্যান বলছে, শরণার্থী শিশুদের সঙ্গে যখন আইনজীবী থাকেন, তখন মাত্র এক তৃতীয়াংশ শিশুর আবেদন অগ্রাহ্য হয়। কিন্তু যখন আবেদনকারী শিশুর সঙ্গে কোনও আইনজীবী থাকেন না, তখন এগারো জন বাচ্চার মধ্যে মাত্র এক জনের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে!
বাকি দশটি বাচ্চার জন্য পড়ে থাকে শুধু অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার পাহাড়।