সতর্ক জীবন
coronavirus

রক্তাক্ত হৃদয়, শক্ত চোয়াল

এ দেশের ভয়াবহ করোনা-পরিস্থিতি দেখে শিউরে উঠেছেন বিশ্ববাসী, টিভির খবরে করোনায় মৃতদের কফিনভর্তি সেনা ট্রাকের সারি দেখে সবারই চোখ জলে ভরে উঠেছে। এ দেশের সরকার, স্বাস্থ্যকর্মী এবং দেশবাসী রক্তাক্ত হৃদয়ে, কিন্তু একজোট হয়ে, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং নির্ভরতাকে হাতিয়ার করে,  চোয়াল শক্ত করে  লড়েছেন এই নাছোড়বান্দা ভাইরাসের সঙ্গে।

Advertisement

মানসী ভট্টাচার্য

রোম শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৩৫
Share:

এ বছরে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ছিল রবিবার। কয়েক জন বন্ধু মিলে রোমের বাইরে নিরিবিলি একটা লেকের পাশে পিকনিক করতে গিয়েছিলাম। ইটালিতে তখন করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। ঠিক তার পরের দিন, ৯ মার্চ, সারা দেশে লকডাউন জারি হয়ে গেল।

Advertisement

এর পরের গল্প সকলের জানা। এ দেশের ভয়াবহ করোনা-পরিস্থিতি দেখে শিউরে উঠেছেন বিশ্ববাসী, টিভির খবরে করোনায় মৃতদের কফিনভর্তি সেনা ট্রাকের সারি দেখে সবারই চোখ জলে ভরে উঠেছে। এ দেশের সরকার, স্বাস্থ্যকর্মী এবং দেশবাসী রক্তাক্ত হৃদয়ে, কিন্তু একজোট হয়ে, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং নির্ভরতাকে হাতিয়ার করে, চোয়াল শক্ত করে লড়েছেন এই নাছোড়বান্দা ভাইরাসের সঙ্গে। আর ধীরে ধীরে মৃত্যুর কালো ছায়াকে পিছনে ফেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পেরেছেন এ দেশের মানুষ।

ইটালির লকডাউন ছিল ইউরোপের সব চাইতে দীর্ঘ এবং কঠিনতম। দশ সপ্তাহের এই লকডাউন শেষ হয় মে মাসে, প্রথমে আঞ্চলিক স্তরে এবং ৩ জুন থেকে পুরো দেশে। সরকারের সামনে এখন এক অগ্নিপরীক্ষা— দীর্ঘ লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির পুনর্নির্মাণ এবং দেশকে এই অতিমারির দ্বিতীয় তরঙ্গ থেকে রক্ষা করা।

Advertisement

ইটালির স্বাস্থ্য মন্ত্রক এই লড়াইয়ের শুরু থেকেই দেশবাসীকে এই ভাইরাস প্রতিহত করার সবিস্তার তথ্য সরবরাহ করেছেন এবং বেশির ভাগ মানুষই নিয়ম মেনে চলেছেন। লকডাউন তুলে নিলেও বাইরে মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক। বিমানবন্দরে যাত্রীদের করোনা-পরীক্ষা করা হচ্ছে। হাসপাতাল, শপিং মল বা দর্শনীয় স্থানে প্রবেশের আগে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। তা ছাড়া, হোটেল, রেস্তরাঁ, কাফে, সুপারমার্কেটের জায়গায় জায়গায় স্যানিটাইজ়ার রাখার ব্যবস্থা আছে। ইটালির প্রতিটি শহরেই রয়েছে অসংখ্য মিউজ়িয়াম। এখন প্রতিটি মিউজ়িয়ামেই এক সঙ্গে সীমিত সংখ্যক দর্শনার্থীকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য ইটালির দ্বার খুললেও বহু দেশের নাগরিকদের জন্য সে দ্বার উন্মুক্ত নয়। এ বছর দেশে পর্যটকের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৫৫ শতাংশ কম।

বেশির ভাগ কর্মীই এখনও ঘরে বসে কাজ করছেন। বোলজ়ানো এলাকায় আগামিকাল, অর্থাৎ ৭ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল খুলছে। দেশের বেশির ভাগ এলাকায় স্কুল-কলেজ অবশ্য খুলছে ১৪ সেপ্টেম্বর।

এ মাসের পরিসংখ্যান বলছে, নতুন সংক্রমণ ফের বাড়ছে। কিন্তু ইটালি এ বার প্রস্তুত। দেশে বেশ কিছু নতুন হাসপাতাল হয়েছে, অনেক হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতালে পরিবর্তিত করা হয়েছে ও জারি রয়েছে টেস্টিং। নতুন সংক্রমণ ঠেকাতে কড়া নিয়ম জারি থাকছে। মাস্ক না-পরলে বিরাট অঙ্কের জরিমানা (এক হাজার ইউরো পর্যন্ত) ধার্য করা হয়েছে।
আশা করা যায়, এ ভাবেই ছন্দে ফিরবে ‘ইউরোপের করোনা-ঘাঁটি’।

লেখক রাষ্ট্রপুঞ্জে কর্মরত

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement