এলজিবিটিকিউ অধিকারের দাবিতে ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ। —রয়টার্সের ফাইল চিত্র।
স্টোনওয়াল আন্দোলনের প্রায় ৬০ বছর হতে চলল, আমেরিকায় এখনও এলজিবিটিকিউ-দের অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে মিশ্র উত্তরই পাওয়া যায়। প্রতি বছর জুনে গৌরবের মাস পালিত হয় আমেরিকা-সহ সারা বিশ্বে। কিন্তু জনমানসে ও প্রশাসকের চোখে আদতে কতটা গুরুত্ব পান এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা? প্রশ্ন করে যে উত্তর পাওয়া গেল তা মিশ্র, কোনও কোনও ক্ষেত্রে খানিক নিরাশাজনকও বটে। তার মানে অবশ্য এই নয় যে, সব ক্ষেত্রেই আশা হারিয়ে গিয়েছে।
আমেরিকায় এ বছরের গৌরবের মাস বেশ ঘটনাবহুল। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পৌরহিত্যে হোয়াইট হাউসে ব্যাপক ভাবে তার উদ্যাপন হয়েছে। বাইডেন সেখানে বলেছেন, ‘‘সমগ্র এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়, বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্ক রূপান্তরকামীদের আমি বলতে চাই—তোমাদের প্রতি সম্মান, ভালবাসা সব রয়েছে। তোমরা সমাজেরই এক জন।’’ দেশের বিভিন্ন প্রদেশে রিপাবলিকান গভর্নরদের পাস করা বিলে সমকামী ও রূপান্তরকামী মানুষদের সমস্যা বাড়ছে। সেখানে প্রেসিডেন্টের কথায় খানিকটা হলেও স্বস্তি মিলেছে।
এই জুনেই নিউ ইয়র্কের একটি স্কুলে ‘প্রাইড ফ্ল্যাগ’ টাঙানো নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় তা সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হন স্কুল কর্তৃপক্ষ। লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি স্কুলে গৌরবের মাস সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকদের একাংশ। তার বিরুদ্ধে আবার সরব হন একাধিক অভিভাবক। এই ধরনের ঘটনা ইঙ্গিত করে, স্কুলে লিঙ্গসাম্যের বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি ও বিতর্ক রয়েছেই।
এই সম্প্রদায়ের একাধিক মানুষের দাবি, এখন রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত প্রদেশগুলিতে একের পর এক এমন বিল পেশ করা হচ্ছে, যাতে তাঁদের জীবনযাপন আরও কঠিন হয়ে পড়ে। ফ্লরিডার গভর্নর রন ডি স্যান্টিস ‘জেন্ডার অ্যাফার্মিং মেডিক্যাল কেয়ার’ অর্থাৎ রূপান্তরকামীরা যে-যে চিকিৎসা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যান, সেগুলিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটি বিলে সই করেছেন। নর্থ ডাকোটা প্রদেশের স্কুলগুলিতে রূপান্তরকামী পড়ুয়াদের বহুবচনের সর্বনাম ধরে ডাকা, অর্থাৎ ‘দে’ বা ‘দেম’-এর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, বহু রূপান্তরকামীই লিঙ্গব্যঞ্জক সর্বনাম ‘হি’ বা ‘শি’-র পরিবর্তে ‘দে’ বা ‘দেম’ ব্যবহারেই বেশি স্বচ্ছন্দ।
তবে আশা রয়েছে। এ বছরই একটি স্বেচ্ছাসেবী এলজিবিটিকিউ সংস্থার করা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শতকরা ৯৬ শতাংশ বিষমকামী আমেরিকান মনে করেন, স্কুল সমস্ত সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের জন্য নিরাপদ হওয়া প্রয়োজন। ৯১ শতাংশ মনে করেন, এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের মানুষের নিজেদের মতো করে বাঁচার অধিকার রয়েছে।
এই গৌরবের মাসেই একটি জনপ্রিয় কফি চেন কর্মচারী ইউনিয়ন তাদের ১৫০টি দোকানে বিক্ষোভ ও বন্ধ শুরু করে। তার অন্যতম কারণ, সংস্থাটি তাদের নীতিতে কিছু পরিবর্তন আনায় বেশ কিছু দোকান থেকে রামধনু-রঙা গৌরবের পতাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তার পরেই শুরু হয় বিক্ষোভ। সংস্থাটি অবশ্য বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে, তারা কোনও ধরনের বৈষম্যকে স্বীকৃতি দেয় না। লিঙ্গবিষয়ক বৈষম্যকেও না। সারা আমেরিকায় ছড়ানো একটি বড় রিটেল সংস্থা গৌরমের মাস উপলক্ষে কিছু সামগ্রী তৈরি করেছিল। কিন্তু কিছু ক্রেতা প্রতিবাদ করায় সেই সব সামগ্রী দোকান থেকে সরিয়ে দেয় তারা। সংস্থাটির এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধেও সমাজমাধ্যমে গড়ে উঠেছে জনমত।
এ কথা মানতেই হবে যে, একাধিক আমেরিকান সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়কে সমর্থন জানিয়ে আসছে। কিন্তু গৌরবের মাসেও যখন বৈষম্যের নানা কাহিনি শুনি, প্রশ্ন ওঠে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বললেও তাঁদের কবে সত্যিই ‘সমাজের এক জন’ ভাবা হবে? মনে হয়, ১৯৬৯ সালের স্টোনওয়াল আন্দোলনের মাধ্যমে যে লড়াইয়ের শুরু, তার পথ বন্ধুর এবং এখনও অনেক বাকি।