ইরাকি সেনাদের উল্লাস। ছবি: এপি।
এক দিকে রণসজ্জা-বোমাবর্ষণ-আত্মঘাতী হানা, আর অন্য দিকে উৎসবের রোশনাই!
জঙ্গিদের উৎখাত করতে গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে মসুল শহর সংলগ্ন এলাকায় লাগাতার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইরাকের যৌথ বাহিনী। আর সেই সেই লড়াইয়ে সরকারপক্ষের সাফল্য কামনায় উৎসবে মেতেছেন মসুলের আদি বাসিন্দারা! যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মাত্র ৮৫ কিলোমিটার দূরের ইরবিল প্রদেশে কাল রাত থেকেই শুরু হয়েছে উৎসব। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। নাচছেন-গাইছেন। কেউ আবার সন্ত্রাসের অন্ধকার দূর হওয়ার প্রার্থনা করে মোমবাতি জ্বালছেন। গির্জায় গিয়ে প্রার্থনায় সামিল হচ্ছে আট থেকে আশি।
২০১৪ সালে মসুল শহর ও সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা কব্জা করে জঙ্গিরা। তার পর রীতিমতো ফতোয়া জারি করে অন্য ধর্মাবলম্বীদের শহর ছাড়ার নির্দেশ দেয় আইএস। প্রাণ বাঁচাতে রাতারাতি পালিয়ে আসেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষজন। সেই ভিটেহারাদের বেশিরভাগই আশ্রয় নেন কুর্দ শহর ইরবিলে। সেই ঘটনার দু’বছর পর মসুল পুনরুদ্ধারে ইরাকি বাহিনীর যুদ্ধ ঘোষণায় আশায় বুক বাঁধছেন তাঁরা।
সেনা বলছে, গত কাল থেকেই মসুল শহরে ঢোকার চেষ্টা করছে বাহিনী। গতকাল রাতে শহরের দক্ষিণপূর্বে নিনেভ প্রদেশের কারাকোশ পর্যন্ত পৌঁছেনো গিয়েছে। কোথাও ট্যাঙ্ক নিয়ে, কোথাও সুড়ঙ্গ কেটে চলছে লড়াই। সঙ্গে চলছে বিমান হানা। ইরবিলে আশ্রয় নেওয়া মানুষের একটা বড় অংশই আদতে এই কারাকোশের বাসিন্দা। সেখানে সেনার পা পড়তেই তাই শুরু হয়েছে উদ্যাপন। হাজেম জেদজো নামে ইরবিলের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘আজ আনন্দের দিন। আমাদের মাটি জঙ্গিদের হাত থেকে মুক্তি পেতে চলেছে। আজ ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’’
মুক্তির আনন্দ উদ্যাপনে আম জনতা উৎসবে মাতলেও মসুল অভিযানের বেশিরভাগটাই এখনও যে বাকি, স্পষ্ট করে দিয়েছে সেনা। জঙ্গিদের পাল্টা তোপের মুখে কোথাও কোথাও অভিযান আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে বলেও এ দিন জানিয়েছেন বাহিনীর মুখপাত্র। শহরের দিকে সেনা এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গিরাও পাল্লা দিয়ে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গাড়িবোমা বিস্ফোরণের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে মার্কিন বিশেষজ্ঞদের একটা অংশের আশঙ্কা, শক্ত ঘাঁটি ধরে রাখতে যে কোনও রকম নাশকতার পরিকল্পনা করতে পারে জঙ্গিরা। ব্যবহার করতে পারে রাসায়নিক অস্ত্রও। ইরাকি কুর্দ বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সিরওয়ান বারজানির কথায়, ‘‘জয় নিয়ে আমরা নিশ্চিত। সামনে এখনও অনেকটা রাস্তা বাকি। দিনে দিনে এই লড়াই কঠিন হবে। চারদিক থেকে মসুল ঘিরে ফেলে ভিতরে ঢুকতে সপ্তাহখানেক সময় লাগবে বলেই মনে হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি অনুসারে পাল্টাবে সময়ের হিসেব। পরিকল্পনামাফিক সব কিছু হলে, এক মাসের মধ্যে মসুল আমাদের হাতে চলে আসবে।’’