ফাইল চিত্র।
প্যান্ডোরার বাক্স থেকে বেরিয়ে পড়েছে কয়েক দশকের যৌন হেনস্থার ইতিবৃত্ত! অভিযোগ পেয়ে নিজের সংস্থা থেকেই এক রকম গলাধাক্কা দেওয়া হয়েছে হলিউডের নামী প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টেইনকে। তাবড় সেলিব্রিটি নিন্দায় সরব হয়েছেন। কিন্তু এ বার নিগৃহীতদের তালিকায় অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, গুইনেথ প্যাল্ট্রোর মতো প্রথম সারির তারকারাও এসে
পড়ায় বেশ বিব্রত আমেরিকার ডেমোক্র্যাট শিবির।
‘শেক্সপিয়র ইন লভ’, ‘দ্য আর্টিস্ট’, ‘দ্য কিংগস স্পিচ’, ‘লায়ন’, ‘ইংলিশ পেশেন্ট’, ‘দ্য বাটলার’-এর মতো বহু জনপ্রিয় ছবির প্রযোজক হার্ভি এত দিন ডেমোক্র্যাটদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের জন্য বিপুল টাকাও ঢেলেছিলেন। নিউ ইয়র্কে তাঁর সংস্থায় ইন্টার্ন হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ওবামা-কন্যা মালিয়া। এখন ওয়াইনস্টেইনের কীর্তিকলাপ দেখে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন হিলারি এবং ওবামা দম্পতি।
ওয়াইনস্টেইন কোম্পানির প্রযোজনা
শেক্সপিয়র ইন লভ
দ্য আর্টিস্ট
দ্য কিংগস স্পিচ
দ্য ইংলিশ পেশেন্ট
সিলভার লাইনিংস প্লেবুক
লায়ন
বস্তুত এত দিন কথায় কথায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘নারীবিদ্বেষী’ বলে বিঁধে এসেছেন ডেমোক্র্যাটরা। এ বার নিজেদের পৃষ্ঠপোষকেরই এমন ‘রূপ’ প্রকাশ পাওয়ায় স্তম্ভিত তাঁরা। বুধবার হিলারি বলেছেন, গোটা ঘটনায় তিনি ‘হতবাক এবং ব্যথিত।’ বিবৃতি দিয়ে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং মিশেল বলেছেন, ‘হার্ভিকে নিয়ে খবরগুলো পড়ে আমরা খুবই বিরক্ত।’ যে মেয়েরা এগিয়ে এসে সত্যিটা বলেছেন, তাঁদের সাহসকে কুর্নিশ জানিয়েছেন ওঁরা।
মেয়েদের কুর্নিশ এবং হার্ভির নিন্দায় অবশ্য রবিবারের পর থেকেই সরব ছিল হলিউড। মেরিল স্ট্রিপ, কেট উইনস্লেট, জেনিফার লরেন্স, জুডি ডেঞ্চ এবং জর্জ ক্লুনি মুখ খুলেছিলেন। কিন্তু তাঁরা এ-ও বলেছিলেন, ব্যক্তিগত ভাবে হার্ভির কাছ থেকে কখনও অসম্মানিত হননি। হার্ভির বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগটা আনছিলেন মূলত হার্ভির সংস্থার কর্মীরাই। কিন্তু মঙ্গলবার অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এবং গুইনেথ প্যাল্ট্রো মুখ খুলে বিষয়টা আরও বিস্তৃত করে তুলেছেন।
জোলির বক্তব্য, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে ‘প্লেয়িং বাই হার্ট’ মুক্তির আগে হোটেলের ঘরে অবাঞ্ছিত ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন হার্ভি। তিনি আপত্তি জানান। জোলির কথায়, ‘‘অল্প বয়েসেই খুব খারাপ অভিজ্ঞতা। তার পর থেকে আর ওঁর সঙ্গে কাজ করিনি। অন্যদেরও সতর্ক করে দিয়েছি।’’ একই অভিজ্ঞতা ‘পাল্প ফিকশন’-এর অভিনেত্রী রোজানা আরকেট এবং ‘এমা’-র গুইনেথ প্যাল্ট্রোর। গুইনেথের দাবি, শ্যুটিং শুরুর আগে কাজের কথা আছে বলে পেনিনসুলা বেভারলি হিলস হোটেলের সুইটে তাঁকে ডেকে পাঠান হার্ভি। প্যাল্ট্রো তখন
মাত্র ২২। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ছোট ছিলাম। ছবি করব বলে সই করেছি। খুব ভয় পেয়েছিলাম।’’ কাঁধে হাত রেখে বেডরুমের দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন হার্ভি। আপত্তি জানিয়ে গুইনেথ বিষয়টা জানান তৎকালীন বয়ফ্রেন্ড ব্র্যাড পিটকে। হার্ভির সঙ্গে এ নিয়ে পিটের ঝামেলাও হয়। হার্ভি প্যাল্ট্রোকে হুমকি দিয়ে বিষয়টা চেপে যেতে বলেন।
হার্ভির বিশাল সাম্রাজ্যের শুরু মিরাম্যাক্স-এর হাত ধরে। ভাই ববের সঙ্গে এই স্টুডিও তৈরি করেছিলেন হার্ভি। মা মিরিয়াম এবং বাবা ম্যাক্সের নামে স্টুডিওর নাম রাখেন দুই ভাই। মিরাম্যাক্সের পরে তৈরি হয় ওয়াইনস্টেইন কোম্পানি। এখন সেখান থেকেই বিতাড়িত হার্ভি। তাঁর বিরুদ্ধে পাহাড়প্রমাণ অভিযোগ পেয়ে যে বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নেয়, তাতে আছেন ভাই বব-ও।
চুপ নেই হার্ভির স্ত্রী জর্জিনা চ্যাপম্যানও (৪১)। তিনি বলেছেন, হার্ভির কাজ ‘ক্ষমার অযোগ্য।’ তাই তিনি বুধবারই হার্ভিকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। এক পত্রিকায় জর্জিনার বক্তব্য, ‘‘ক্ষমার অযোগ্য ওঁর এই সব কাজের জন্য বহু মহিলাই অসম্ভব যন্ত্রণা পেয়েছেন। তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা।’’