সক্রিয় রাজনীতি থেকে বেশ কয়েক মাস দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন নিজেকে। কাল নিউ ইয়র্কে নারীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন তিনি। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েই বিস্ফোরক হিলারি রডহ্যাম ক্লিন্টন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজের হার নিয়ে এর আগে বিশেষ মুখ খোলেননি প্রাক্তন মার্কিন বিদেশসচিব।
কিন্তু মঙ্গলবার ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকাকে সোজাসুজিই তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের ডিরেক্টর জেমস কোমি আর রুশ হ্যাকারদের জন্যই শেষ মুহূর্তে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হেরে গিয়েছিলেন তিনি।
৮ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিল আমেরিকায়। তার ঠিক কয়েক দিন আগে, ২৮ অক্টোবর মার্কিন কংগ্রেসকে একটি চিঠি দিয়ে কোমি জানান, ক্লিন্টনের ই-মেল সংক্রান্ত তদন্ত ফের শুরু করতে চান তিনি। অভিযোগ, বিদেশসচিব থাকাকালীন পরিবারের ব্যক্তিগত ই-মেল সার্ভার থেকে সরকারি কাজ সেরেছিলেন হিলারি। যাতে প্রচুর গোপন নথি ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। ৬ নভেম্বর, ভোটের ঠিক দু’দিন আগে কোমিই আবার মার্কিন কংগ্রেসকে জানান, হিলারির বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করার মতো কোনও প্রমাণ এফবিআই পায়নি। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের সেই চিঠিই ভোটারদের মনে ভয় তৈরি করে দিয়েছিল বলে মত হিলারির।
প্রাক্তন মার্কিন ফার্স্ট লেডি বলেছেন, ‘‘২৭ অক্টোবর ভোট হলে আমিই আপনাদের প্রেসিডেন্ট হতাম। কিন্তু সেটা হয়নি। ২৮ অক্টোবর এমন কিছু মজাদার কাণ্ড ঘটল যে দেশবাসী আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। আমার প্রচার পর্ব নিখুঁত ছিল না, জানি। কিন্তু প্রচার সংক্রান্ত অনেক তথ্যই ফাঁস করে দিয়েছিল রুশ হ্যাকাররা। আর তাতেই ভোটাররা ভয় পেয়ে যান।’’
কাল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকেও এক হাত নিয়েছেন হিলারি। জানিয়েছেন, তিনি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত যে, ভোটে নাক গলিয়েছিলেন পুতিন এবং তা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে সাহায্য করতেই। বিদেশসচিব থাকাকালীন পুতিনের সঙ্গে হিলারির সম্পর্ক মোটেও ভাল ছিল না। আর ট্রাম্পের পাশে থেকে পুতিন তার শোধ তুলেছেন বলেও দাবি করেছেন হিলারি।
মহিলা বলে কি বিশেষ করে কিছু মানুষের অপছন্দের পাত্রী হতে হয়েছিল? হিলারি স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘হ্যাঁ। নারী বিদ্বেষ এখনও আমাদের আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।’’ তবে সব শেষে অবশ্য পরাজয়ের যাবতীয় দায় নিজের ঘাড়েই নিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘এই হারের জন্য আমিই দায়ী। কারণ আমাকেই মানুষ ভোট দেননি।’’
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলেছেন খোদ কোমি। আজ তিনি বলেছেন, ‘‘ওই সময় তদন্তের অগ্রগতি কংগ্রেসকে জানানো জরুরি ছিল। না হলে বড় বিপর্যয় হতে পারত।’’
ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থীর সব অভিযোগের জবাব দিতে বেশি সময় নেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কাল রাতেই পর পর বেশ কয়েকটি টুইট করে হিলারিকে বিঁধেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথমে লিখেছেন, ‘‘কোমি তো হিলারির কাছে আশীর্বাদের মতো। কারণ কোমির জন্যই ওঁর অনেক অনৈতিক কাজকর্ম ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছিল।’’ আর রুশ হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে ট্রাম্পের টুইট, ‘‘ডেমোক্র্যাটরা তো দীর্ঘ দিন ধরেই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য রাশিয়াকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে আসছে।’’