পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের রমরমা নিয়ে আক্ষেপ শোনা গেল পাক বিদেশ মন্ত্রীর কণ্ঠেই। —প্রতীকী ছবি।
হাফিজ সইদ এবং তার সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা পাকিস্তানের জন্য বোঝা। অকপটে স্বীকার করলেন পাক বিদেশমন্ত্রী খোয়াজা আসিফ। নিউ ইয়র্কে মঙ্গলবার এশিয়া সোসাইটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় যোগ দিয়েছিলেন আসিফ। সেখানেই তিনি এই মন্তব্য করেছেন। সন্ত্রাসবাদীদের রমরমার কারণে পাকিস্তানকে অত্যন্ত চড়া মূল্য চোকাতে হচ্ছে বলে আক্ষেপও করেছেন পাক বিদেশমন্ত্রী। হাফিজ সইদের মতো জঙ্গিদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার জন্য পাকিস্তানকে একটু সময় দেওয়া দরকার, মন্তব্য খোয়াজা আসিফের।
আলোচনা সভার প্রশ্নোত্তর পর্বে পাক বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনারা একটা নাম উল্লেখ করেছেন। ওটা একটা নিষিদ্ধ সংগঠন। ভদ্রলোক (হাফিজ সইদ) এখন গৃহবন্দি। কিন্তু আমি আপনাদের সঙ্গে সহমত যে, এ ক্ষেত্রে আরও অনেক কিছু করার আছে। আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে।’’ পাকিস্তানে যে সন্ত্রাসবাদের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে এবং কট্টরবাদীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তা আসিফ স্বীকার করে নেন। সন্ত্রাসের পরিকাঠামো ভাঙা পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত জরুরি বলেও তিনি দাবি করেন। কিন্তু রাতারাতি তা করা সম্ভব নয় বলে তাঁর ইঙ্গিত। খোয়াজা আসিফের কথায়, ‘‘সইদ, লস্কররা আমাদের জন্য বোঝা, আমি এটা মানি, কিন্তু এদের নির্মূল করার জন্য আমাদের কিছুটা সময় দিন। এই বোঝাগুলোর মোকাবিলা করার সক্ষমতা আমাদের নেই।’’
আরও পড়ুন: মায়ানমার সীমান্তে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, বিধ্বস্ত জঙ্গি শিবির
২০০৮ সালে মুম্বইয়ে হওয়া ভয়ঙ্কর জঙ্গিহানার মূল চক্রী হাফিজ সইদ এখন পাকিস্তানে গৃহবন্দি অবস্থায় থাকলেও, তার সক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণ করতে ইসলামাবাদ ব্যর্থ। হাফিজের সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা এবং জামাত-উদ-দাওয়া মোটের উপর নির্বিঘ্নেই কার্যকলাপ চালাচ্ছে পাকিস্তানে। হাফিজ এ বার নতুন রাজনৈতিক দলই তৈরি করছে, যার নাম ‘মিল্লি মুসলিম লিগ’। দলের স্বীকৃতি চেয়ে পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ন্ত্রক সংস্থায় আবেদনও জমা দিয়েছে হাফিজ শিবির। স্বীকৃতি আসার আগেই একটি উপনির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছিল হাফিজ শিবির, না জিতলেও অনেককে চমকে দিয়ে নির্বাচনে তৃতীয় স্থান পেয়েছেন হাফিজের প্রার্থী।
আরও পড়ুন: ভারত অত্যন্ত উদ্ধত, মন্তব্য চিনা কাগজে
নির্বাচনের ফলাফলে অশনি সঙ্কেত দেখতে শুরু করেছে পাকিস্তানের সরকার। হাফিজ সইদের মতো জঙ্গিদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে পারছে না বলে গোটা বিশ্বের সামনে বার বার অপদস্থ হতে হচ্ছে ইসলামাবাদকে। সেই হাফিজ সইদ এ বার রাজনৈতিক দল গড়ে ফেললে পাক প্রশাসনের মুখ যে আরও পুড়বে, তা নিয়ে সংশয় নেই। তাই মিল্লি মুসলিম লিগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি না দিতে নির্বাচন নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে পাকিস্তানের সরকার। গোয়েন্দা রিপোর্ট তুলে ধরে সেই চিঠিতে জানানো হয়েছে, এই দলকে স্বীকৃতি দিলে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
দেশে সন্ত্রাসের রমরমার জন্য অবশ্য আমেরিকার দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী। আফগানিস্তানকে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব মুক্ত করতে আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাকিস্তান সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিয়েছিল, তার পর থেকেই ক্রমশ সন্ত্রাসবাদীদের রমরমা বেড়েছে পাকিস্তানের নানা অংশে। এমনই মন্তব্য করেছেন খোয়াজা আসিফ। তাঁর আক্ষেপ, ২০ বছর আগে এই জঙ্গিরা হোয়াইট হাউসের চোখের মণি ছিল। আর আজ হোয়াইট হাউস জঙ্গিদের এই বাড়বাড়ন্তের জন্য পাকিস্তানকে আক্রমণ করছে।