দাদা প্রধানমন্ত্রী, ঘোষণা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার

শনিবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল বেরনোর পর থেকেই ইস্তফা দেওয়ার জন্য বিজয়ী শিবিরের চাপ আসছিল প্রধানমন্ত্রী রনিলের উপরে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০১
Share:

দু’ভাই: মাহিন্দা ও গোতাবায়া রাজাপক্ষ। ফাইল চিত্র

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে দাদা মাহিন্দা রাজাপক্ষকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসানোর কথা ঘোষণা করলেন গোতাবায়া রাজপক্ষ। রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে জানিয়েছেন, পার্লামেন্টে এখনও তাঁর সরকারের গরিষ্ঠতা রয়েছে। তবু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রায়কে মর্যাদা দিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব ছাড়বেন কাল সকালে।

Advertisement

শনিবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল বেরনোর পর থেকেই ইস্তফা দেওয়ার জন্য বিজয়ী শিবিরের চাপ আসছিল প্রধানমন্ত্রী রনিলের উপরে। রনিল সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করতেই গোতাবায়া আজ তাঁর দাদা, তথা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দাকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসানোর কথা জানিয়ে দেন। কয়েক দশক আগে নির্মম হাতে তামিল টাইগারদের বিদ্রোহ দমন করার অভিজ্ঞতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু অভিযোগ যাঁর ঝুলিতে। রনিল জমানার শেষ পর্বে ছিলেন বিরোধী দলনেতা। মাঝে ২০১৮-র ২৬ অক্টোবর তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপাল সিরিসেনা। মাহিন্দার পরে প্রেসিডেন্ট হন তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী সিরিসেনা। তিনি মাহিন্দাকে প্রধানমন্ত্রী করেও টিকিয়ে রাখতে পারেননি।

একাধিক বারের চেষ্টাতেও গরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে পারেননি মাহিন্দা। আবার পদ ছাড়তেও রাজি হননি। শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে দীর্ঘ অচলাবস্থা ও অভূতপূর্ব সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হয় এতে। ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রে তখন কে আসল প্রধানমন্ত্রী, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয় আন্তর্জাতিক স্তরে। প্রধানমন্ত্রী বাসভবন নিয়েও চলে দড়ি টানাটানি। রনিলের অনুগামীরা আদালতের দ্বারস্থ হন। সুপ্রিম কোর্ট দু’বার স্পষ্ট জানায়, মাহিন্দার ‘প্রধানমন্ত্রিত্ব’ অবৈধ। সিরিসেনার পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তও অবৈধ। অবশেষে গত বছর ১৫ ডিসেম্বর ‘প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা’ দেন মাহিন্দা। ফের প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসবেন তিনি। সৌজন্যে এ বার ভাই গোতাবায়া।

Advertisement

রাজাপক্ষ ভাইদের জমানায় শ্রীলঙ্কা কতটা চিন ও তাদের মিত্র পাকিস্তান ঘেঁষা নীতি নিয়ে চলে, সে দিকে সতর্ক নজর রাখছে দিল্লি। প্রাথমিক ভাবে অবশ্য ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোরই কথা বলছে রাজাপক্ষ শিবির। তার পথ সুগম করতে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত কালই কলম্বোয় এসেছেন দু’দিনের জন্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লেখা অভিনন্দন ও আমন্ত্রণের চিঠি তুলে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার হাতে। জয়শঙ্করের এই সফর পূর্ব নির্ধারিত ছিল না। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার প্রথম বিদেশ সফরটি হতে চলেছে ভারতেই। ভোটের ফল বেরনোর পর রবিবারই গোতাবায়াকে ফোন করেছিলেন মোদী। দেরি না-করে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও মঙ্গলবার ফোন করেন তাঁকে। পাকিস্তান যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। কলম্বোর পাক দূতাবাস আজ জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।

চব্বিশ বছর বয়সে দেশের নবীনতম এমপি হিসেবে পার্লামেন্ট পা রেখেছিলেন ১৯৭০ সালে। ২০০৫-র নভেম্বর থেকে ২০১৫-র জানুয়ারি পর্যন্ত মাহিন্দা ছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট। এলটিটিই দমন, তামিলদের প্রতি কঠোর মনোভাবের কারণে পরিচিতি পান ‘স্ট্রংম্যান’ হিসেবে। আর রনিল থাকছেন পরবর্তী পার্লামেন্ট নির্বাচনের অপেক্ষায়। এ নিয়ে কথা বলবেন স্পিকার, নিজের শিবির ও সরকার পক্ষের এমপি-দের সঙ্গে। রনিল শিবিরের নেতা সাজিথ প্রেমদাসা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরে তাঁর অনুগামীরা নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার কথা ভাবছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement