‘ফ্রিডম ডে’ উপলক্ষে লকডাউন বিরোধী সমাবেশ। সোমবার লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কোয়ারে। ছবি রয়টার্স।
অতিমারিকে কেন্দ্র করে বছরভর চলা লকডাউন বিধিতে সোমবার ইতি টানল ব্রিটেন। কিন্তু স্বস্তি দেওয়া তো দূর, সাধারণের চিন্তা বাড়িয়ে রীতিমতো ‘উপহাস’ হয়ে দাঁড়াল ব্রিটেনের এই ‘ফ্রিডম ডে’!
যে দিন জনগণকে বিধিমুক্ত করছে প্রশাসন, সে দিনই দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী ব্যবস্থা ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিসেস (এনএইচএস)-এর ট্র্যাক অ্যান্ড ট্রেস সিস্টেম-এর তরফে ব্রিটেনবাসীদের একটা বড় অংশের কাছে মেসেজ গিয়েছে নিভৃতবাসে যাওয়ার। এই ঘটনায় বিরোধীরা তো বটেই প্রশাসনের সমর্থকদেরও কটাক্ষ, ‘‘দিনটিকে ‘ফ্রিডম ডে’ না বলে ‘পিং ডে’ নাম দিলে ভাল হত।’’
তৃতীয় ঢেউ চলছে ব্রিটেনে। গত এক সপ্তাহেই প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষকে নিভৃতবাসের পরামর্শ দিয়েছে এনএইচএস। তার মধ্যেই মাস্ক না-পরা এবং পারস্পরিক দূরত্ববিধি তুলে নেওয়ার প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কিথ স্ট্যামারের কটাক্ষ, ‘‘এ তো সিট বেল্ট না-পরে অ্যাক্সিলরেটরে পা দিয়ে দেওয়া!’’
শনিবার নিজের কোভিড পজ়িটিভ হওয়ার খবর দিয়েছেন দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভেদও। তাঁর সংস্পর্শে আসায় গতকাল থেকেই নিভৃতবাসে দেশের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনক। প্রথমে যদিও তা এড়িয়ে যাওয়ারই জোর চেষ্টা করেছিলেন দু’জনে। বিরোধী এবং সাধারণ মানুষের বিদ্রোহের মুখে যদিও শেষমেশ সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য হন তাঁরা।
বিধিনিষেধ উঠলেও সুপারমার্কেটগুলিতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব কপালে ভাঁজ ফেলেছে সাধারণের। কর্তৃপক্ষের মতে, আগামী দিনে পরিস্থিতি কেমন থাকবে তা নিয়ে শঙ্কার জেরেই বাড়িতে খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস মজুত করে রাখছে জনতা। তবে এ ভাবে চললে আগামী দিনে পণ্যের সঙ্কট আরও গুরুতর হতে পারে বলেই আশঙ্কা তাঁদের।
গত কয়েক দিনে এত জন নিভৃতবাসে যাওয়ার নির্দেশ পেয়েছেন যে কর্মী সঙ্কটও দেখা দিয়েছে সে দেশে। কর্মীর অভাবে বহু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থার উপরেও এই কর্মী সঙ্কটের ব্যাপক প্রভাব পড়ছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ।
এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন ছাড় দিলেও মাস্ক পরারই পক্ষপাতী বাসিন্দাদের একাংশ। তবে উল্টো চিত্রও বিরল নয়। দেশ জুড়ে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হতেই নাইটক্লাবগুলিতে দেখা গিয়েছে মাস্কহীন জনতার উপচে পড়া ভিড়। গত বছর অতিমারির শুরু থেকেই বন্ধ ছিল মিউজ়িক কনসার্ট। সোমবার থেকে তা ফের চালু হওয়ার ছাড়পত্র পাওয়ায় মানুষের ঢল নেমেছে সেখানেও। তবে তৃতীয় ঢেউ চলাকালীন এ ভাবে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ায় অশনি সংকেত দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ দিকে, ডেল্টা স্ট্রেনের চোখ রাঙানির মাঝে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে সোমবার থেকে পাঁচ দিনের জন্য বাড়ানো হল লকডাউন। আগে থেকেই লকডাউন চলছে সিডনিতেও। তা ছাড়া, কড়াকড়ি জারি রয়েছে ভিক্টোরিয়া প্রদেশেও।
অন্য দিকে, সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণের পর শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির পরিমাণ ন’মাস পর্যন্ত উচ্চ মাত্রায় থাকে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ইটালির এক শহরতলির মোট তিন হাজার বাসিন্দার মধ্যে উপসর্গযুক্ত এবং উপসর্গহীন আক্রান্তদের উপর পর্যালোচনা চালিয়ে এই তথ্য মিলেছে। ইটালির পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের বিশেষজ্ঞদের চালানো এই পর্যালোচনার সবিস্তার রিপোর্টটি ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ নামক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সোমবার। রিপোর্টটির দাবি, নিভৃতবাস এবং লকডাউন ছাড়া এই অতিমারি মোকাবিলা সম্ভব ছিল না।