ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মাইকেল ফ্লিন। ছবি: রয়টার্স।
মার্কিন ভোটে রুশ হস্তক্ষেপের তদন্তে তিনি যে এফবিআইকে মিথ্যে কথা বলেছিলেন, আদালতে তা স্বীকার করেছেন আমেরিকার প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন। ঘটনাটা শুক্রবারের। আর তার ঠিক ২৪ ঘণ্টার মাথায়, অর্থাৎ কাল টুইটারে মার্কিন প্রেসি়ডেন্ট ডোনাল্ড যা বললেন, তার অর্থ দাঁড়ায়— তিনি নিজেও সে কথা জানতেন। আর সেই কারণেই তিনি ছেঁটে ফেলেছিলেন জেনারেল ফ্লিনকে।
তবে ট্রাম্পের মতে, ভোটের ফল ঘোষণার ঠিক পর-পরই তাঁর অন্তর্বর্তী দলের সদস্য হিসেবে মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনও ভুল করেননি ফ্লিন। সেটা ছিল সম্পূর্ণ বৈধ। ট্রাম্প তাই তাঁর প্রাক্তন ঘনিষ্ঠের পক্ষে, না বিপক্ষে— আজ তা নিয়েই দিনভর উত্তাল হয়ে রইল আমেরিকা। কূটনীতিকদের একাংশ আবার বলছেন, এমন টুইটে ট্রাম্প নিজেই খাল কেটে কুমির ডাকলেন। বিশেষত এমন একটা সময়ে, ফ্লিন যখন নিজেই রুশ-তদন্তে সহযোগিতার ব্যাপারে রাজি হয়ে গিয়েছেন। তবে তাঁর শর্ত একটাই — সাজা কম করতে হবে।
কী করেছিলেন জেনারেল ফ্লিন? ঘটনাটা ২০১৬-র নভেম্বরের। ট্রাম্প তখনও সরকারি ভাবে হোয়াইট হাউসে আসেননি। এফবিআই ও একাধিক সংবাদমাধ্যমের অভিযোগ, সেই সময় আমেরিকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলাকের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন ফ্লিন। তবে দু’জনের মধ্যে কী কথা হয়েছিল, ফ্লিন তা নিয়ে বেমালুম মিথ্যে বলেছিলেন বলে দাবি এফবিআইয়ের। বস্তুত এর জেরেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে ২৩ দিনের মাথায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ফ্লিন। ট্রাম্প তখন ফ্লিনের রুশ-যোগাযোগের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘অযোগ্য’ বলেই সরানো হল ফ্লিনকে। অথচ আজ প্রেসিডেন্ট বলছেন, তাঁর মিথ্যাচারণের কথা তিনি জানতেন।
আর জল্পনাটা তৈরি হচ্ছে এখান থেকেই। অভিযোগ উঠছে, ট্রাম্প ফের বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ফ্লিনকে নিয়ে তদন্তের কথায় মাথাচাড়া দিচ্ছে প্রাক্তন এফবিআই কর্তা জেমস কোমি ও তাঁর ছাঁটাইয়ের প্রসঙ্গও। গত মে মাসে চাকরি গিয়েছিল কোমির। মার্কিন ভোটে রুশ হস্তক্ষেপের তদন্তে বাগড়া দিতেই প্রেসিডেন্ট তাঁকে বরখাস্ত করেছিলেন বলে পরে এ নিয়ে তোপ দাগেন কোমি। মার্কিন কংগ্রেসে দাঁড়িয়ে জুন মাসে তিনি জানান, ট্রাম্প তাঁকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে গিয়ে ফ্লিনের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করতে চাপ দিয়েছিলেন। কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, ফ্লিনের মিথ্যাচার জেনেও ট্রাম্প যদি তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধের কথা বলে থাকেন, তা নিশ্চিত ভাবেই প্রেসিডেন্টকে সমস্যায় ফেলবে।
ট্রাম্প যদিও আজ পরে আরও একটি টুইটে দাবি করেছেন, কোমির এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। সবটাই ভুয়ো সংবাদমাধ্যমের কারসাজি। তবু বিতর্ক থামছে কই! এ দিনই আবার এক মার্কিন দৈনিক জানিয়েছে, নাগাড়ে ট্রাম্প-বিরোধী প্রচারের দায়ে মাস কয়েক আগে রবার্ট মুলারের নেতৃত্বাধীন তদন্তকারী দল থেকে এক বর্ষীয়ান এজেন্টকে ছেঁটে ফেলে এফবিআই। তাই প্রশ্ন উঠছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সততা নিয়েও।
ফ্লিনের স্বীকারোক্তির পরে ট্রাম্প যদিও বলছেন, ‘‘রাশিয়ার সঙ্গে রিপাবলিকান শিবিরের যে কোনও আঁতাঁত ছিল না, এতে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই আমরা খুশি।’’ কিন্তু ফ্লিন যে গোপনে রুশ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, তা-ও যে স্পষ্ট হয়ে গেল! একাধিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, ট্রাম্প প্রশাসনের এক ‘শীর্ষ কর্মকর্তার’ নির্দেশেই সে বার সের্গেই কিসলাকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন ফ্লিন। সেই শীর্ষ কর্মকর্তাটি কে? ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম উপদেষ্টা তথা প্রেসিডেন্টের জামাই জ্যারেড কুশনারের দিকেও আঙুল তুলছেন তদন্তকারীদের একাংশ।