ঘাতক: নিকোলাস ক্রুজ। ছবি: রয়টার্স।
এক সময় স্কুলে অনেকেই ঠাট্টা করত নিকোলাস ক্রুজকে নিয়ে। তারা বলত, যদি কেউ কোনও দিন স্কুলে গুলি চালায়, তা হলে সেটা মি. ক্রুজ ছাড়া কেউ হবে না! ঠাট্টাটা যে এমন নির্মম সত্যি হয়ে যাবে একদিন, কেউ ভাবেনি।
শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য শুধু ব্রোওয়ার্ড কাউন্টির পার্কল্যান্ডে মারজরি স্টোনম্যান ডগলাস স্কুল নয়। আরও দু’টি বেসরকারি স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল নিকোলাস ক্রুজকে। ডগলাস স্কুলেরই হাতে গোনা দু’এক জনকে সে নিজেই বলেছিল এ কথা। তার মানসিক সমস্যাই যে এ দিনের হত্যালীলার পিছনে অন্যতম কারণ, ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে সেটা।
বুধবার দুপুরে স্কুলের চারতলা থেকে তখন বেরিয়ে আসছে পড়ুয়ারা। গুলির শব্দে অনেকেই ভয় পেয়ে ফেরত যায় ক্লাসরুমে। চারতলার একটি ঘরে পড়ুয়াদের রেখে দরজা আটকাতে গিয়েছিলেন শিক্ষক। গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। স্কুলভবনের নানা দিকে ছুটে রাইফেল উঁচিয়ে ত্রাস ছড়ায় নিকোলাস। ক্লাসরুমের ভিতরেও গুলি ধেয়ে আসতে দেখে এক কোণে কোনওমতে লুকিয়ে বেঁচেছে কেউ কেউ।
কিন্তু কেন এই হত্যালীলা?
যে রাইফেল দিয়ে নিকোলাস ১৭ জনকে মেরেছে, সেটি বৈধ ভাবেই কেনা বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জিম লুইস। ক্রুজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল থেকে স্পষ্ট, ছুরি-বন্দুক নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে ভালবাসত সে। কারও সঙ্গে খুব একটা মেলামেশাও ছিল না। ইউটিউব-সহ আরও কিছু সাইটে বিভিন্ন ভিডিও-র নীচে তার ভয়ঙ্কর সব মন্তব্য পাওয়া গিয়েছে— ‘‘আমি এআর-১৫ দিয়ে গুলি করে মানুষ মারতে চাই’’ বা ‘‘বহু লোক মেরে লড়তে লড়তে মরতে চাই।’’
ব্রোওয়ার্ড কাউন্টির শেরিফ স্কট ইজরায়েল প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, যারা নিকোলাসকে চিনত, তারা সবাই বলেছে ওকে খুব ‘স্বাভাবিক’ বলে মনে হত না। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে বড়াই করত। কখনও বা নিষ্ঠুর ভাবে ইঁদুর, ব্যাঙ মেরে আনন্দ পেত। তার মা পুলিশে ফোন করে বলতেন, ছেলেকে একটু সৎবুদ্ধি দিন! তিন হাজার পড়ুয়া ভর্তি স্কুলে নিকোলাসের একটি বন্ধুও ছিল না। আচার-আচরণ দেখে কেউ খুব একটা তার কাছে ঘেঁষতও না। সঙ্গে সবসময় বন্দুক বা গুলি রাখা, এক বার স্কুলে ছুরি নিয়ে আসা— এই সব কারণেই স্কুল তাকে বহিষ্কার করেছিল বলে দাবি তার সহপাঠীদের। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ ব্যাপারে বিশদে কিছু বলতে চাননি। কিন্তু কথা বললেই হয় বন্দুক, নয় গুলি অথবা ছুরি, এই ছিল নিকোলাসের বিষয়।
আরও পড়ুন: নোটবন্দিতে পোয়াবারো অন্য মোদীর
পার্কল্যান্ডে ক্রুজদের এক প্রতিবেশী হেলেন প্যাসিওলা জানিয়েছেন, নিকোলাস তার বাবা-মায়ের দত্তক সন্তান। বাবা অনেক দিন আগে মারা গিয়েছেন। মা লিন্ডা গত বছর মারা যান। তার পরে নিকোলাসকে আশ্রয় দেয় জিম লুইস নামে ওই অ্যাটর্নির পরিবার। তারা লিন্ডাদের বন্ধু ছিলেন। তাঁরাও এখন আতঙ্কিত।