—প্রতীকী চিত্র।
আমার দাদু বলতেন, রবি ঠাকুর সবার জন্য, সব পার্বণের জন্য কিছু না কিছু লিখে গেছেন। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে অন্যতম হল ‘দুর্গোৎসব’। আর এই দুর্গোৎসবই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব হিসেবে পরিচিত। আবার সেই দুর্গাপুজোই যখন ইউনেস্কোর প্রতিনিধিত্বমূলক তালিকায় ‘ইনট্যানজিবল্কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’তে স্থান পায় (সাল ২০২১), তখন আমাদের ছাতি গর্বে আরও যেন ফুলে ওঠে। আর আমরা যারা প্রবাসী, আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলো ধরে রাখার জন্য একটু বেশি প্রয়াস করতে হবে, যাতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এগুলি বহন করে যেতে পারে।
‘বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অব গোথেনবার্গ’, আনুষ্ঠানিক ভাবে স্থাপিত হয় ২০১৯-এ কিন্তু আমরা অনেক দিন আগে থেকেই ভারতের সাংস্কৃতিক উৎসব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে একাধিক উৎসব উদ্যাপন করে এসেছি এই ‘স্ক্যানডেনেভিয়ান’ মহানগরী গোথেনবার্গে। বলাই বাহুল্য, দুর্গোৎসব হল সবথেকে বড় এবং অন্যতম।
বাঙালির দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটে মহালয়ার শুভ বন্দনায়। এই বছর ১৪ অক্টোবর মহালয়া। বিশ্বাস করা হয়, এই দিন দেবী দুর্গা পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন আর সেই দিন দুর্গাপুজো শুরু। আমাদের পুজো এ বার ২০ এবং ২১ অক্টোবর। ওই দু’দিনে আমরা চার দিনের পুজো সম্পন্ন করব। প্রথম দিনে মায়ের আগমন (বোধন) এবং ষষ্ঠী ও সপ্তমীর পুজো আর দ্বিতীয় দিনে অষ্টমী, নবমী এবং বিজয়া দশমী— যে দিন মা কৈলাশে ফিরে যাবেন।
সুইডেনে দুর্গাপুজো করার পুরোহিতের অভাব। যে ক’জন আছেন, তাঁরা নিজের শহরে ব্যস্ত থাকেন। আর আমাদের গোথেনবার্গে এমন কেউ নেই, যিনি দুর্গাপুজো করতে পারেন। সেই জন্য প্রত্যেক বার আমরা বাইরে থেকে পুরোহিত আনিয়ে মায়ের পুজো করে এসেছি। এই বার আমরা একটু অন্য রকম ভেবেছি। কয়েক মাস আগে আমরা মহিলা পূজারিদের একটি দল তৈরি করেছিলাম। তারপর স্বনামধন্য নন্দিনী ভৌমিকের সঙ্গে আমরা কথা বলি। উনি আমাদের অভিপ্রায় শুনে বাহবা দেন, আর তার পর নিজের হাতে আমাদের এই দলটাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রশিক্ষণ দেন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ওঁর প্রশিক্ষণ অনুযায়ী আমরা পুজো করার অনুশীলন করে চলেছি। আমরা গর্বিত যে, পশ্চিম সুইডেনে আমরাই প্রথম, যেখানে মহিলা পূজারিরা মা দূর্গার পুজা করবেন।
খাবারের প্রতি বাঙালিদের দুর্বলতার কথা অনেক কবিই বলেছেন, তাই সে নিয়ে আলাপ-আলোচনায় লজ্জা নেই। এই খাদ্যরসিক বাঙালির খাদ্যতালিকায় আমিষের পাশাপাশি নিরামিষও জায়গা করে নিয়েছে। খাওয়াদাওয়ায় বৈচিত্র আনতে আমরা সবাই মিলে মায়ের ভোগ রান্না করব আমাদের নিজের নিজের রান্নাঘরে, আর সেই ভোগই হবে আমাদের মধ্যাহ্ণভোজ। আর সন্ধ্যেবেলায় ‘আনন্দমেলা’ তো আছেই। সেখানে গোথেনবার্গের ছোট ‘শিল্পপতিদের’ তৈরি খাবার চেখে দেখার মতো।
অন্য দিকে, সাংস্কৃতিক কাজকর্মের পরিকল্পনাও তুঙ্গে। কে বাচ্চাদের নাচ শেখাবে? কী নাচ হবে এ বার? আর কে আমার মতো বেসুরোদের ঠিকঠাক ট্রেনিং দিয়ে একটা ‘জ্যামিং সেশন্’ উপস্থাপন করবে, সেই সব নিয়ে জব্বর আলোচনা আর পরিকল্পনা চলছে। অবশ্য, সুইডেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরে প্রশিক্ষিত নর্তকী বা গায়কের কোনও অভাব নেই। তাঁরা সবাই মায়ের আগমনীর অপেক্ষা করে আছেন। আপনাদেরও আমন্ত্রণ রইল, আসবেন কিন্তু।