বঙ্গভবনে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেট্টি। —নিজস্ব চিত্র।
‘‘কেমন আছেন?’’ স্পষ্ট বাংলাতেই বললেন নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেট্টি। শুক্রবার দুপুরে দিল্লির বঙ্গভবনে মধ্যাহ্নভোজ সারতে আসার আগে বাংলার হোমওয়ার্ক সেরেই এসেছেন বোঝা গেল! খেতে বসার আগে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এখানকার ফুচকা, ঝালমুড়ি, মাছের ঝোল অপূর্ব। বাংলার খাবারের খ্যাতি দেশ জুড়ে। আজ খেতে এসেছি।’’
সত্যিই তৃপ্তি করে খেলেন বটে গারসেট্টি। ভোজ কয় যাহারে! প্রথমে আমপোড়ার সরবত। তার পরের খাদ্যতালিকা বেশ দীর্ঘই। থোড়, মোচা, শুক্তো, ফিশ ফ্রাই, ভেটকির পাতুরি, ঘি-ভাত, বাসন্তী পোলাও, লুচি, পাঁচ রকম ভাজা, কাতলা মাছের কালিয়া, খাসির মাংস কষা, চাটনি, পাঁপড়, সন্দেশ, রসগোল্লা, রাজভোগ এবং মিষ্টি দই। খাওয়ার সময়েই গারসেট্টিকে আলাদা করে কলা, থোড় ও মোচা দেখিয়ে তাদের উৎপত্তি ও মাহাত্ম্য বুঝিয়েছেন বঙ্গভবনের হেঁশেলের কর্মীরা। কারণ, খেতে খেতেই কৌতূহলী রাষ্ট্রদূত জানতে চেয়েছিলেন, কী করে বানানো হল এমন সুস্বাদু পদ? উলুবেড়িয়া থেকে আসা রাঁধুনি সমর মুখোপাধ্যায় সকাল থেকেই ব্যস্ত ছিলেন আমেরিকার কর্তাকে খাওয়াতে। বললেন, “শাক, কাঁচকলা, পটল, বেগুন-সহ পাঁচ রকম ভাজা পরিবেশন করেছি কাঁসার পাত্রে। উনি সব রান্নার খুঁটিনাটি জানতে চাইছিলেন।”
খাওয়ার পরে পরিতৃপ্ত গারসেট্টি। বলছেন, “ভেটকি মাছের পাতুরিটাই সেরা! এই পদটি এক দিকে জটিল, অন্য দিকে পরিস্রুত! কাঁচকলা ভাজাও খুব ভাল লেগেছে।” জানালেন, খাওয়ার পাতে বাংলা নিয়েই আড্ডা হয়েছে দূতাবাসের বাঙালি সহকর্মীদের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে এক জন ‘আমার সোনার বাংলা’ দু’কলি গেয়ে শুনিয়েছেন। সত্যজিৎ রায়ের ছবি থেকে ইস্ট-মোহন ম্যাচ— লুচি-মাংস খেতে খেতে বঙ্গসংবাদের বাদ পড়েনি কিছুই। “এ বার আমাকে কলকাতা যেতেই হবে,” বললেন গারসেট্টি।
সূত্রের মতে, আজকের সফর আসলে নয়া আমেরিকান দূতের ‘আঞ্চলিক কূটনীতি’। এর আগে তামিলনাড়ু ভবনে গিয়ে খেয়েছিলেন দোসা-ইডলি। পরে অন্যান্য রাজ্যের ভবনে গিয়েও রসনা-পরিক্রমা সারবেন তিনি।