Election Process

ভোট দিতে দেওয়া হয় ছোট্ট পেনসিল

ঠিক রাত ১০টায় ভোটগ্রহণ বন্ধ হলেই বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। তার পরেই শুরু হয় বুথগুলো থেকে গণনা কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:২৬
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

হাতে রইল পেনসিল।

Advertisement

হ্যাঁ, এ দেশে এখনও পেনসিলের চিহ্ন দিয়েই ভোট দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। ভোটাররা বুথে এসে ব্যালট পেপারে ভোট দেন। প্রত্যেক ভোটারকে দেওয়া হয় ছোট্ট পেনসিল। যে প্রার্থীকে তিনি বাছতে চলেছেন, তাঁর নামের পাশে কাটা চিহ্ন দিতে হয় ওই পেনসিল দিয়ে। সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। আগের দফার ভোট পর্যন্ত ব্রিটেনবাসীদের কোনও সচিত্র পরিচয়পত্র লাগত না। ভোটাররা পোলিং অফিসারের কাছে গিয়ে নিজের নামের পাশে টিক চিহ্ন দিয়েই ভোটটা দিয়ে দিতে পারতেন। তবে এ বছর থেকে পরিচয়পত্র নিয়ে পোলিং স্টেশনে ঢোকার রীতি চালু হতে চলেছে বলে খবর।

ঠিক রাত ১০টায় ভোটগ্রহণ বন্ধ হলেই বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। তার পরেই শুরু হয় বুথগুলো থেকে গণনা কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া। গণনা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকেন প্রতিটি দলের পর্যবেক্ষকেরা। ব্যালট বাক্সগুলি নিয়ে ভোটকর্মীদের ছোটাছুটি এখানকার টিভি চ্যানেলগুলি লাইভ দেখায়। কোন কাউন্সিল থেকে সবার আগে বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হচ্ছে, তা নিয়ে কৌতূহল সব সময়ই তুঙ্গে থাকে। প্রথম দফার ফলাফল রাত ১১টায় প্রকাশ করা হয়। তবে ভোটগ্রহণ বা গণনা পদ্ধতি টিভি চ্যানেলে সরাসরি দেখানো হলেও কোন দল জিতবে বা দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর গদিতে কে বসতে চলেছেন, তা নিয়ে কোনও ধরনের আলোচনা চালানো যায় না চ্যানেলগুলিতে। তারা শুধুমাত্র কত শতাংশ ভোট পড়ল, বা কোন প্রার্থী কত করে ভোট পাচ্ছেন, সেই তথ্যটুকু দর্শকদের জানাতে পারে। বস্তুত, বিদেশ থেকে কোনও পর্যটক এ দেশে বেড়াতে এলে টিভির নিউজ় চ্যানেল না খোলা পর্যন্ত টেরই পাবেন না যে এ দেশে ভোট চলছে। গোটা পর্বটাই নীরবে সেরে ফেলা হয়।

Advertisement

ভারতের মতো এখানেও সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়। ভোটাররা যে দলকে সমর্থন করছেন, সেই দলের প্রার্থীকে ভোট দেন। প্রতিটি কেন্দ্র থেকে এক এক জন প্রার্থী কতগুলি করে ভোট পাচ্ছেন, তা গণনা করা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রের জয়ী প্রার্থীসংখ্যাকে যোগ করে নির্ধারিত হয় কোন দল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ অর্থাৎ হাউস অব কমন্সে ক’টি করে আসন পেল। জয়ী দলের নেতাই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় স্থানাধিকারী দলের নেতা হাউস অব কমন্সের বিরোধী দলনেতা হিসেবে নির্বাচিত হন। ব্রিটেনে বর্তমানে তিনটি প্রধান দল রয়েছে, যারা পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়ে থাকে। কনজ়ারভেটিভ, লেবার পার্টি এবং লিবারাল ডেমোক্র্যাটস। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড জুড়ে মোট সাড়ে ছ’শোটি নির্বাচনী কেন্দ্র রয়েছে ব্রিটেনে।

রাজনীতিকদের নিয়ে কৌতুক বা মশকরা করা দলেরও বিশেষ উপস্থিতি রয়েছে ব্রিটিশ রাজনীতিতে। ১৯৮২ সালে যেমন সঙ্গীতজ্ঞ ডেভিড সাচ তৈরি করেছিলেন ‘মনস্টার রেভিং লুনি পার্টি’। ১৯৯৯ সালে ডেভিড মারা গেলেও এখনও পর্যন্ত রয়ে গিয়েছে তাঁর দল। প্রতি নির্বাচনে নিয়ম করে প্রার্থীও দেয় তারা। এই দলের প্রার্থীরা পরে থাকেন প্রাচীন পোশাক আর তাঁদের মাথায় থাকে ক্লাউনের মতো টুপি।

এ বার আসা যাক প্রচার পর্বে। ব্রিটেনের আদলে ভারতে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলেও প্রচার কায়দা এ দেশে সম্পূর্ণ আলাদা। অবশ্য এখানেও বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রচারের ব্যবস্থা রয়েছে। কোনও প্রার্থীকে তিনি কেন ভোট দেবেন, তা-ও বোঝানো হয় ভোটারদের। সকলের দরজায় পৌঁছে দেওয়ায় হয় বিভিন্ন দলের প্রচার পুস্তিকা। তবে মাইক আর লাউড স্পিকার দিয়ে বিশাল বিশাল জনসভায় প্রচারের চল এখানে একেবারেই নেই। নেই দেওয়াল লিখন বা রাজনৈতিক দলগুলির বড় বড় পোস্টার বা ব্যানার টাঙানোর রীতিও। যে কোনও দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ‘ইলেকটোরাল বাস’-এ চেপে প্রচারে যান। প্রার্থীরা অংশ নেন বিতর্ক সভায়। এ দেশের একটি মাত্র টিভি চ্যানেলকে সেই বিতর্ক প্রচারের স্বত্ব দেওয়া আছে। নির্বাচনী বিধি মেনে ভোটগ্রহণের ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে বন্ধ হয় প্রচার পর্ব। ফল বেরোনোর সময়ে প্রায় প্রতিটি প্রার্থীই ফিরে যান তাঁদের নির্বাচনী কেন্দ্রে।

ফল বেরোনোর পরের দিনই নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বাকিংহাম প্রাসাদে যাবেন রাজার সঙ্গে দেখা করতে। রাজাকে তিনি জানাবেন সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে দেশে নতুন সরকার গড়তে চলেছে তাঁর দল। বাকিংহাম থেকে সোজা ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে ফিরে আসবেন নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। বক্তৃতা শেষে অতিপরিচিত সেই কালো দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকবেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement