ভোট দিচ্ছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। রবিবার। ছবি: রয়টার্স।
ফ্রান্সের জাতীয় নির্বাচনের প্রথম দফায় আজ মূল ভূখণ্ডে ভোটগ্রহণ হল। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ আইনসভা ভেঙে দিয়ে দেশকে তড়িঘড়ি জাতীয় নির্বাচনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। অনেকে মনে করছেন, ফ্রান্সের ভোটে এ বারে অতি দক্ষিণপন্থীরা অনেকটাই এগিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ফ্রান্সে তারা এই প্রথম পার্লামেন্টের ক্ষমতাও দখল করতে পারে। ভোটের আগে অধিকাংশ জনমত সমীক্ষাতেও মারিন ল্য পেনের ন্যাশনাল র্যালিকেই এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। বর্তমান ফরাসি প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আটালের নেতৃত্বে এনসেম্বল জোট ২০.৫% নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৫৭৭ জন সদস্যকে বেছে নিতে চলেছেন ফ্রান্সের চার কোটি ৯৫ লক্ষ ভোটার। সরকারি হিসাবে আজ, প্রথম দফায় দুপুর পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২৫.৯ শতাংশ। ২০২২ সালের ভোটে যেটা ছিল ১৮.৪৩ শতাংশ। এ বার অনুপস্থিত ভোটারদের ব্যালট চেয়ে করা আবেদন জমা পড়েছিল ’২২ সালের থেকে অন্তত পাঁচ গুণ বেশি। দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ রয়েছে ৭ জুলাই। তার পরেই ফয়সালা হয়ে যাবে, অতি দক্ষিণপন্থী মারিনের দল শেষ হাসি হাসবে কি না। ন্যাশনাল র্যালি অবশ্য এই নির্বাচনে তাদের প্রধান মুখ জর্ডান বার্ডেলাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে উন্মুখ।
চলতি মাসের গোড়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভোটে ন্যাশনাল র্যালির কাছে তাঁর দলের পরাজয়ের পরে মাকরঁ জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন। অনেকের চোখেই এই পদক্ষেপ জুয়ার চালের মতো। মুদ্রাস্ফীতি ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে একটা বড় অংশের ভোটারের ক্ষোভ রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, মাকরঁ উদ্ধত এবং সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন। কেউ কেউ বলছেন, তিনি একটি কোম্পানির সিইও-র মতো দেশ চালান, কিন্তু অংশীদারদের সঙ্গে জোট গড়তেই ব্যর্থ হয়েছেন।
এই বিষয়গুলিকেই কাজে লাগিয়ে নানা সমাজমাধ্যমে প্রচারে ঝাঁপিয়েছে অভিবাসন-বিরোধী ন্যাশনাল র্যালি। তারা প্রশ্ন তুলেছে, ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করলে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে। যৌথ নাগরিকত্বেরও বিরোধিতা করছে। বলছে, সীমান্তে কড়া নিয়ন্ত্রণের কথা। ক্রমশ অতি দক্ষিণপন্থী ও অতি বাম, এই দু’টি মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়ছে ফ্রান্সের রাজনীতি। প্রচারে বার বার শোনা গিয়েছে ঘৃণাভাষণ।
মনে করা হচ্ছে, এ বার ভোটের ফল ইউরোপের বাজার-অর্থনীতি, ইউক্রেনের পশ্চিমি সাহায্য পাওয়া, ফ্রান্সের পরমাণু অস্ত্রভান্ডার পরিচালনার মতো বিভিন্ন বিষয়ে আঁচ ফেলতে চলেছে। ফ্রান্সে প্রায় ৬০ লক্ষ মুসলিম রয়েছেন। তাঁদের একাংশের শঙ্কা, ন্যাশনাল র্যালি ক্ষমতায় এলে মুসলিমদের অধিকার খর্ব হতে পারে।