দু’দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ছবি: রয়টার্স।
তুরস্ক এবং সিরিয়াতে ভূমিকম্পের জেরে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। সেই সংখ্যা বর্তমানে ৩৮০০ ছাড়িয়েছে। সরকারি হিসাব বলছে, এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত দু’দেশের ভূমিকম্পের কবলে পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৪০৩০ জনের। যার মধ্যে শুধু তুরস্কেই মৃত্যু হয়েছে ২, ৩৭৯ জনের। সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১৩৬ জন। দু’দেশের আহতের সংখ্যাও কয়েক হাজার। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগ বলছে, সে দেশে কমপক্ষে ৫৬০৬টি বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে এখনও বহু মানুষ আটকে রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও দু’দেশের প্রশাসনের আশঙ্কা। ইতিমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ওই দুই দেশকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া দুই দেশে ভূমিকম্পের পর থেকেই শুরু হয়েছে হাহাকার। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে এবং প্রিয়জনদের খোঁজার তাগিদে আর্তি চোখে পড়ছে। কিছু কিছু পরিবারে শোকপালন করার মতো সদস্যও বেঁচে নেই। ভূমিকম্প বিধ্বস্ত দুই দেশের হাসপাতালগুলিতে উপচে পড়ছে মৃতদেহ। চারিদিকে শুধু কান্নার রব। এক দিন আগেও যেগুলি বহুতল ছিল, সোমবারের ভূমিকম্পের পর তা কংক্রিট এবং স্টিলের রডের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এক দিন আগেও যেগুলি বহুতল ছিল, সোমবারের ভূমিকম্পের পর তা কংক্রিট এবং স্টিলের রডের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ছবি: রয়টার্স।
সিরিয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সে দেশে মৃত ১,১৩৬ জনের মধ্যে সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকাতে ৭১১ জন মারা গিয়েছেন। যার মধ্যে বেশিরভাগই আলেপ্পো, হামা, লাতাকিয়া এবং তারতুস অঞ্চলে। পাশাপাশি সিরিয়ার প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘হোয়াইট হেলমেট’ জানিয়েছে, সিরিয়ার সরকার বিরোধী এলাকাগুলিতে ৭৪০ জন মারা গিয়েছেন।
সোমবার স্থানীয় সময় অনুযায়ী ভোরে ৪টে নাগাদ কেঁপে ওঠে তুরস্ক এবং সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। রিখটার স্কেলে সেই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৮। কম্পনের উৎসস্থল ছিল দক্ষিণ তুরস্কে। গাজিয়ানতেপ প্রদেশের পূর্ব দিকে নুরদাগি শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার পূর্বে ভূগর্ভের প্রায় ১৮ কিলোমিটার গভীরে। প্রথম কম্পনের ১১ থেকে ১৫ মিনিটের ব্যবধানে দ্বিতীয় বার কেঁপে ওঠে লেবানন, সিরিয়া এবং সাইপ্রাসের বিভিন্ন অংশ। ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস)-র মতে, এই কম্পনের তীব্রতা ছিল ৬.৭। প্রায় দেড় মিনিট পর্যন্ত তার কম্পন অনুভূত হয়। কম্পনের জেরে হুড়মুড়িয়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে থাকে একের পর এক বহুতল এবং বাড়ি। সেই ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই আরও দুবার কেঁপে ওঠে সিরিয়া এবং তুরস্কের বিস্তীর্ণ এলাকা। ফলে আরও বেড়ে যায় বিপদ।
১৯৩৯ সালের পর তুরস্কে এই প্রথম এত শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হল। ইউএসজিএস জানিয়েছে, সে বছরও তুরস্কে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৭.৮। এরজিনকান প্রদেশে ভূমিকম্পে সে বার ৩৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ৭ কম্পাঙ্কের ভূকম্প গত ২৫ বছরে ৭ বার অনুভূত হয়েছে তুরস্কে।