আলাপচারিতা: মুখোমুখি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন। সোমবার হেলসিঙ্কিতে। এএফপি
বিকেল সাড়ে চারটেয় (ভারতে সন্ধ্যা ৭টা) মধ্যাহ্নভোজে সপার্ষদ দেখা হল দু’জনের। এর পর ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসার আগে ডোনান্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলে গিয়েছিলেন, ‘‘প্রত্যেকের জন্যই খুব ভাল শুরু।’’ ঠিক ছিল বৈঠকটি হবে দেড় ঘণ্টার। কিন্তু সাংবাদিক-কূটনীতিকদের অপেক্ষার সময় ও বিশ্বের কৌতূহল বাড়িয়ে দু’জনে আজ কথা বললেন পাক্কা দু’ঘণ্টা।
কী বেরিয়ে এল রুদ্ধদ্বার বৈঠক থেকে? রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সংযত, সংক্ষিপ্ত, অর্থবহ জবাব, ‘‘বিশ্ব জুড়ে আর্থিক সমস্যা ও সন্ত্রাসবাদের মতো নতুন চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে। ঠান্ডা যুদ্ধের কঠিন দিনগুলি ফিরিয়ে আনার মানেই হয় না। আমরা যে পারস্পরিক আস্থা গড়ে তুলতে চাই, এই বৈঠক তারই প্রতিফলন।’’ পুতিন আরও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ‘খোলামেলা ও কার্যকর আলোচনা’ হয়েছে।
আর ট্রাম্প? দেশে প্রেসিডেন্ট হয়ে ইস্তক রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে। তাঁকে ক্ষমতায় বসানোর পিছনে ক্রেমলিনের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে প্রথম থেকেই। সেই অভিযোগের জল গড়াল দুই শীর্ষনেতার বৈঠকেও। বিষয়টি নিয়ে পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন ট্রাম্প। পুতিনকে পাশে নিয়ে ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন এ কথা।
সাংবাদিকের প্রশ্নে পুতিন বলেন, ‘‘হ্যাঁ, আমি চেয়েছিলাম ট্রাম্প জিতুন। কারণ, তিনি রাশিয়া-আমেরিকা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা বলেছিলেন। তবে ভোটে নাক গলানোর কথা একেবারেই বাজে কথা। মগজ থেকে এই ভাবনা ঝেড়ে ফেলুন।’’ পাশাপাশি ট্রাম্পের দাবি, ‘‘জিতেছি কিন্তু ভাল প্রচার করেছি বলেই।’’ ট্রাম্পের মতে, মার্কি তথ্য বিদেশে গিয়ে থাকলে সেটা অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। ২০১৬-র ভোটে রাশিয়ার নাক গলানো নিয়ে মার্কিন তদন্ত আমেরিকারই বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
হেলসিঙ্কিতে পুতিনের সঙ্গে এই শীর্ষ বৈঠকের আগে আমেরিকা-রাশিয়া সম্পর্ক তলানিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের দেশের কর্তাদের প্রকাশ্যে দায়ী করতেও ছাড়েননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আজ বৈঠকের পরে ট্রাম্প জানালেন, ‘‘রাশিয়ার সঙ্গে জোরদার আলোচনার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটল। শান্তির লক্ষ্যে নতুন রাস্তা খুলেছে গঠনমূলক আলোচনায়।’’ বৈঠকের আগে পুতিন বলেছিলেন, সন্ত্রাসবাদ থেকে অর্থনীতি— অনেক বিষয়ে আমাদের কথা বলার সময় এসেছে। এ দিনের বৈঠকের পরে ট্রাম্পের মন্তব্য, ‘‘আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা যে সাফল্য পেয়েছি, অন্যদের তার ফায়দা নিতে দেবে না আমেরিকা।’’ ট্রাম্প জানান, পরমাণু অস্ত্রের প্রসার ঘটছে। আমেরিকা ও রাশিয়া এতে ইতি টানতে চায়। এই সূত্রে ট্রাম্প জানান, পুতিনকে তিনি বুঝিয়েছেন ইরানকে আরও চাপ দেওয়া প্রয়োজন।
আপাত ভাবে নিছকই নিরস, নিরুচ্ছ্বাস কিছু কূটনৈতিক বিবৃতিই শোনালেন দু’জনে। নতুন কথা কিছুই নেই। কিন্তু বৈঠকের তাৎপর্য যে আরও গভীরে, সেটা বুঝেই এই এর ফলাফল বিশ্লেষণে ব্যস্ত বিশ্বের কূটনীতিকরা।
দক্ষিণ ফিনল্যান্ডে হেলসিঙ্কিতে পূর্ব ও পশ্চিম থেকে এসেছেন দুই ক্ষমতাধর। শক্তির টক্কর গাড়িতেও! মার্কিন প্রেসিডেন্ট এসেছেন তাঁর বিখ্যাত ‘বিস্ট’ লিমুজিনের কনভয় নিয়ে। পিছিয়ে রইলেন না পুতিনও। তিনি এনেছেন রাশিয়ার গর্ব ‘কোর্টেজ’।পুতিনের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ডিজাইনে তৈরি হয়েছে এই সুপার-লিমুজিন। পুতিনের সুরক্ষার জন্য এতে কী কী ব্যবস্থা রয়েছে, সে সব গোপন রেখেছে রাশিয়া। দেশে প্রথম বার ব্যবহার করেছেন মে মাসে। বিদেশে এই প্রথম ‘কোর্টেজ’-এ সওয়ার হলেন পুতিন।