গোল্ডেন পেক্টোরাল। সম্প্রতি এই সোনার ব্রেস্টপ্লেটটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হই চই শুরু হয়েছে। ইউক্রেনের কিয়েভের সংগ্রহশালায় প্রদর্শনীতে রাখা ছিল এই হারটি। প্রাচীন এই হারের অদ্ভুত নকশা দেখে হতবাক ফ্যাশন ডিজাইনাররাও।
১৯৭১ সালে বর্তমান ইউক্রেনের কুরগানের একটি সমাধিস্থলে তোভস্তা মোজিলা গুহা থেকে এটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। ২৪ ক্যারাট সোনার এই হারটির ব্যাস প্রায় ৩০.৬ সেমি। লম্বায় প্রায় ২০ মিটার।
হারটির ওজন প্রায় ১.১৫ কিলোগ্রাম। অর্ধচন্দ্রকার এই হারটি তিনটি ভাগে ভাগ করলে একটা গোটা জাতির বেশ কিছু কথা জানা যেতে পারে। কেউ ভেড়ার দুধ দোয়াচ্ছেন, কেউ বা বুনছেন পশম। এমনই নকশা রয়েছে নেকলেসটিতে।
সাইথিয়ান সভ্যতার এই ব্রেস্টপ্লেটের মাঝের অংশটি দেখে বোঝা যায়, ইউরেশীয় নোমাড এই আদিবাসীদের সঙ্গে প্রকৃতির গভীর সম্পর্ক ছিল।
বর্তমান দক্ষিণ সাইবেরিয়ায় ৯০০ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই সাইথিয়ান সভ্যতা বিকশিত হয়েছিল। ইতিহাসবিদদের মতে, চতুর্থ শতকের মধ্যভাগে কোনও এক রাজার গহনা ছিল এটি। কারণ একমাত্র রাজার ক্ষেত্রেই হার এত দীর্ঘ হত। মৃত্যুর সময় মূল্যবান সামগ্রীর সঙ্গে সমাধিস্থ করা হয়েছিল হারটিও।
তবে এই ব্রেস্টপ্লেটটি যে সাইথিয়ান রাজার, তাঁর নাম এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। সম্প্রতি এই হারের পিছনে গোটা কাহিনিটি প্রকাশ্যে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই হার তৈরি করেছিলেন গ্রিসের কোনও কারিগর।
পশুপাখিদের প্রাধান্য রয়েছে এই পাতের নকশায়, রয়েছে ঘোড়ার নকশাও। ফুটে উঠেছে সাইথিয়ানদের জীবনযাত্রার চিত্রও।
তিনটি আলাদা ভাগে জীবনের সাফল্য, ফুল-পাতা, মৃত্যু, জীবজন্তু ও প্রকৃতিকে আলাদা ভাবে দেখানো হয়েছে। সিংহ, বুনো শুয়োর, প্যান্থারের সঙ্গে শিকার কাহিনিও ফুটে উঠেছে এই সাইথিয়ান ব্রেস্টপ্লেটে।
পৌরাণিক গ্রিফিনও রয়েছে এই হারের নকশায়। যার মাথা ও ডানা ঈগলের, দেহ সিংহের, খাড়া কানও রয়েছে। গ্রিফিনের সঙ্গে ঘোড়ার যুদ্ধের ছবিও ফুটে উঠেছে।
এই হারে দু’জন লম্বা চুল দাড়িওয়ালা মানুষকে দেখা গিয়েছে, পশমের কোট বুনছেন তাঁরা। হাতে রয়েছে তিরও। তবে দু’টি আলাদা সম্প্রদায়ের মানুষ হতে পারেন তাঁরা। নকশায় মিলেছে সেই ইঙ্গিত।
হারের অংশে ফড়িংয়ের নকশার ইঙ্গিতও রয়েছে। ফড়িংয়ের ঝাঁকের সঙ্গে অন্য একটি কাহিনিও জড়িয়ে। যেখানে ফড়িংয়ের হানায় ফসলের ক্ষতির কথাও বলা হয়েছে।
এই হারের মূল্য কয়েক লক্ষ কোটি টাকা বললেও কম বলা হবে, জানিয়েছেন এক আর্ট ডিলার।
এই সোনার পেক্টোরালটি নিয়ে আগ্রহ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। কারণ একটি পেক্টোরাল থেকেই একটা সভ্যতার অজস্র না জানা কথা সামনে এসেছে।