পরমাণু সমঝোতার খবরে উল্লাস তেহরানের রাস্তায়। ছবি: এএফপি।
এক সময়ে ‘শয়তানি অক্ষ’-এর অংশ হিসেবে ইরানকে দেখেছিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। সে দেশের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে বিপদের কথা ঢাক পিটিয়ে প্রচারও করেছে ওয়াশিংটন। সেই ইরানের সঙ্গেই এ বার পরমাণু ক্ষেত্রে সমঝোতার পথে এক ধাপ এগোল আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দেশগুলি। এই সমঝোতাকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিষয়টি নিয়ে খুশি ইরানের তেলের অন্যতম খরিদ্দার ভারতও।
ইরানের পরমাণু প্রকল্পে অস্ত্র তৈরি হচ্ছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ ওয়াশিংটনের। বরাবরই এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে ইরান। বেশ কয়েক বার ইরানের পরমাণু প্রকল্পে অস্ত্র তৈরি রুখতে তেহরানের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন পশ্চিমী কূটনীতিকেরা। কিন্তু সেই আলোচনা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।
গত ১২ বছর ধরে দফায় দফায় কথা বলেছেন দু’পক্ষের প্রতিনিধিরা। শেষ পর্যন্ত সুইৎজারল্যান্ডে দীর্ঘ আলোচনার পরে পরমাণু চুক্তি নিয়ে প্রাথমিক সমঝোতা হয়েছে। এই সমঝোতা অনুযায়ী, পরমাণু ক্ষেত্রে বেশ কিছু ছাড় দিতে রাজি হয়েছে তেহরান। পরমাণু অস্ত্রের উপযোগী সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পরিমাণ কমানো থেকে পরমাণু প্রকল্পে আন্তর্জাতিক নজরদারি-গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইরান সরকার।
সে দেশের ফর্দো ও নাতানৎজ পরমাণু কেন্দ্র নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল পশ্চিমী দুনিয়া। ফর্দোতে পরমাণু কেন্দ্রের বদলে পরমাণু বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্র গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইরান। নাতানৎজে আন্তর্জাতিক নজরদারিতে পরমাণু গবেষণা চলবে।
এই সব পদক্ষেপের বদলে ইরানের বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই নিষেধাজ্ঞায় গত এক দশকে বড় ধাক্কা খেয়েছে ইরানের অর্থনীতি। ইরানের তেল সম্পদ আন্তর্জাতিক বাজারে ফের আসার সম্ভাবনায় তেলের দামও পড়ে গিয়েছে কিছুটা।
কূটনীতিকদের মতে, পরমাণু ক্ষেত্রে এই সমঝোতার পিছনে অন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শিয়াদের সাহায্য করছে ইরান। সরাসরি না হলেও পরোক্ষে তাতে ইরানকে সমর্থন করছে আমেরিকা। পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতিতে এখন আমেরিকা ও ইরানের পরোক্ষ সহযোগিতার প্রয়োজন বুঝতে পারছে দু’পক্ষই।
তবে এখনও বাধা আছে বিস্তর। আমেরিকায় বিরোধী রিপাবলিকানরা এখনও এই সমঝোতা নিয়ে বিশেষ খুশি নন। তাই ৩০ জুনের মধ্যে পরমাণু চুক্তি হলেও তাতে মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন পেতে ওবামা প্রশাসনকে বহু কাঠখড় পোড়াতে হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ইরান ও পশ্চিমী দুনিয়ার মধ্যে সমঝোতায় খুশি ভারত। ইরান ভারতের তেল আমদানির অন্যতম উৎস। ইরানের উপরে নির্ভরতা কমাতে বার বার নয়াদিল্লিকে চাপ দিয়েছে ওয়াশিংটন। নিষেধাজ্ঞার ফলে আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ইরানের পাওনা মেটানোও মুশকিল হয়েছিল। বিষয়টি মার্কিন নেতৃত্বকে একাধিক বার জানিয়েছে ভারত।
কূটনৈতিক লাভ আসলে হল কার, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে কিছু দিন।