Gunman Attack

মিলল কার্ডের দেহ, উঠছে আরও কড়া বন্দুক আইনের দাবি

মেনের হত্যাকাণ্ডের পরে নতুন করে আমেরিকার বন্দুক আইন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে। হওয়ারই কথা, তার কারণ ২০২২ সালে গোটা মেন প্রদেশের মাত্র ২৯টি হত্যার ঘটনা ঘটেছিল।

Advertisement

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

বস্টন শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৫৮
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাড়ি থেকে এ বার বেরোতে পারবেন আমেরিকার মেন প্রদেশের লুইসটন শহরের মানুষ। দু’দিন তল্লাশির পরে অবশেষে লুইসটনের অদূরে লিসবন শহরের ঝর্নার পাশ থেকে রবার্ট কার্ড নামের বন্দুকবাজের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। গত বুধবার এই রবার্টের হাতেই প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন। প্রাথমিক তদন্তে এটা জানা গিয়েছে যে নিজের ছোড়া গুলিতেই প্রাণ গিয়েছে রবার্টের। সে যে মানসিক সমস্যায় ভুগছিল তা বুধবারই তদন্তে প্রকাশিত। বৃহস্পতিবার তার একটি বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময় ছেলেকে উদ্দেশ করে লেখা একটি সুইসাইড নোট পায় পুলিশ। উদ্ধার হয় রবার্টের ফোনও। পুলিশ জানিয়েছে, ফোনটি বাড়িতে রেখে গিয়েছিল সে, তাই ফোনের সাহায্যে তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। মেন প্রদেশের গভর্নর জ্যানেট মিলসের কথায় কার্যত ফুটে উঠল সেই স্বস্তিরই ছাপ— ‘রবার্ট কার্ড আর কারও জন্য বিপজ্জনক নয়, এটাই শান্তির।’

Advertisement

জ্যানেট এ-ও জানিয়েছেন যে, তিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ফোন করে কার্ডের দেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ‘লুইসটন ও তার চারপাশের এলাকাগুলি অবশেষে আতঙ্কমুক্ত হল। সেখানকার মানুষের গৃহবন্দি দশা কাটল।’ এর পাশাপাশি তিনি আমেরিকার বন্দুক সং‌ক্রান্ত হিংসা রোধে কড়া পদক্ষেপের আবেদন করেছেন আমেরিকান কংগ্রেসের কাছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমেরিকাবাসীদের এ ভাবে ভয়ে ভয়ে বাঁচার কথা নয়।’’

মেনের হত্যাকাণ্ডের পরে নতুন করে আমেরিকার বন্দুক আইন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে। হওয়ারই কথা, তার কারণ ২০২২ সালে গোটা মেন প্রদেশের মাত্র ২৯টি হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। সেখানে লুইসটনের মতো শান্ত নিরিবিলি শহরে এক দিনে অ্যাসল্ট রাইফেলে ১৮ জনের মৃত্যু এক অভাবনীয় ঘটনা। মেন প্রদেশে শিকার অন্যতম বিনোদন, সুতরাং বন্দুক ব্যবহারের মাত্রা সেখানে বেশি। নেই কোনও ‘রেড ফ্ল্যাগ’ আইনও। এই আইনটি দেশের যে ২১টি প্রদেশে রয়েছে, সেখানে কোনও ব্যক্তির পরিজন, চিকিৎসক বা আইনরক্ষেকরা যদি আদালতে আবেদন করেন যে ওই ব্যক্তি বিপজ্জনক, তা হলে আদালতের নির্দেশে ওই ব্যক্তির বন্দুক বাজেয়াপ্ত করা হয়। মেন প্রদেশে এই আইন নেই। ফলে মানসিক সমস্যা থাকলেও বন্দুক বাজেয়াপ্ত করা হয়নি রবার্টের।

Advertisement

লুইসটনের এই ঘটনার পরে বন্দুক আইন নিয়ে নিজের অবস্থান আমূল পাল্টে ফেলেছেন মেন প্রদেশের ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেস প্রতিনিধি জ্যারেড গোল্ডেন। তিনি জানিয়েছেন, বন্দুক রাখা নিয়ে তাঁর আগের অবস্থান সঠিক নয়। প্রসঙ্গত, তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র এর আগে দু’বারই ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিল। ২০২২ সালে যখন হাউজ় অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভস বন্দুক ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা পাস করেছিল, যে পাঁচ জন ডেমোক্র্যাট তার বিরোধিতা করে, গোল্ডেন ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। এখন তিনি বলছেন, লুইসটন শহরের ঘটনা তাঁকে বড় শিক্ষা দিল।

মেন প্রদেশের বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন অত্যন্ত দুর্বল, এমনটাই দাবি করেছেন ক্যাম শ্যানন। একটি স্বেচ্ছাসেবী বন্দুক নিয়ন্ত্রণ সংগঠনের প্রধান তিনি। তাঁর কথায়, ২০১৯ সালে মেন-এ ‘ইয়েলো ফ্ল্যাগ’ আইন জারি হয়। এই আইনে বন্দুক বাজেয়াপ্ত করার আগে বহু বার পর্যালোচনার কথা রয়েছে। বিশেষ করে, সন্দেহভাজনকে আগে মানসিক স্বাস্থ্যপরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, তার পরেই সিদ্ধান্ত হবে বিপজ্জনক কি না। শ্যাননের মতো অনেকেরই দাবি, এই আইন ভীষণ দীর্ঘসূত্রী। মেন-এর প্রাক্তন সেনাকর্মী রবার্ট মানসিক সমস্যার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। গার্হ্যস্থ হিংসার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে। তবু তার কাছে ছিল অ্যাসল্ট রাইফেল। এতগুলো ‘রেড ফ্ল্যাগ’ থাকা সত্ত্বেও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর না হলে যে কোনও সময় এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement