প্রতীকী চিত্র।
অতিমারি কমেনি, উল্টে বাড়ছে। ফের এক বার এ কথাই মনে করিয়ে দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। পরপর সাতটি সপ্তাহে সংক্রমণ লাগাতার ঊর্ধ্বমুখী।
বিশের বিষ ২০২০-তে শেষ হয়ে যাবে, এমনটাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল বিশ্ববাসী। টিকাকরণ শুরু হওয়ায় বিশ্বাস আরও জোরদার হয়। কিন্তু বাস্তবটা তেমন নয়। ৫ থেকে ১১ এপ্রিল, এই এক সপ্তাহে গোটা বিশ্বে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৪৫ লক্ষ মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৭৬ হাজার। সংক্রমণ প্রায় ৭ শতাংশ বেড়েছে। সংক্রমণ বৃদ্ধিতে প্রথম পাঁচে রয়েছে ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিল, তুরস্ক এবং ফ্রান্স। গোটা বিশ্বে এ ভাবে এক সঙ্গে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ, নতুন স্ট্রেন। ১৩২টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ব্রিটেনের অতিসংক্রামক বি.১.১.৭ ভেরিয়্যান্ট। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম দেখা মেলে বি.১.৩৫১। এখন অন্তত ৮২টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এটি। পি.১ প্রথম চিহ্নিত হয়েছিল ব্রাজিলে। বর্তমানে এই ব্রাজিল স্ট্রেনের খোঁজ মিলেছে অন্তত ৫২টি দেশে।
বহু ক্ষেত্রে নতুন স্ট্রেনে টিকা কাজ দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা যেমন ‘চ্যাডক্স১’ কেনার চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে এই অভিযোগে। ফাইজ়ার অবশ্য দাবি করছে, তাদের টিকা সব স্ট্রেনের বিরুদ্ধেই কাজ দিচ্ছে। কিন্তু কাজ দিক, আর না-ই দিক, টিকা পাইনি অর্ধেক বিশ্বেরও বেশি। একমাত্র ব্রিটেন ও আমেরিকার মতো হাতেগোণা কিছু দেশে জোরকদমে টিকাকরণ চলছে। জাপানে এখনও পর্যন্ত ১১ লক্ষ বাসিন্দার টিকাকরণ হয়েছে। মোট বাসিন্দা ১২ কোটি ৬০ লক্ষ। অর্থাৎ ১ শতাংশেরও কম বাসিন্দা টিকা পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আবার ০.৪ শতাংশ মানুষ দু’টি ডোজ় পেয়েছেন। কিন্তু এই দেশেই আর ১০০ দিনের মাথায় শুরু হতে চলেছে অলিম্পিক্স। ২০২০ সালে টোকিয়ো অলিম্পিক্স হওয়ার কথা ছিল। কোভিড পরিস্থিতিতে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। ২০২১ সালে টিকা এসে গিয়েছে বাজারে, কিন্তু মানুষের কাছে পৌঁছয়নি। সম্প্রতি অলিম্পিক্সের সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবকরা আয়োজকদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তাঁদের নিরাপত্তার জন্য কী ব্যবস্থা করা হচ্ছে? তাঁদের জানানো হয়েছে, প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবককে মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হবে। জার্মান স্বেচ্ছাসেবক বারবারা হলথুস হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ওরা একবারও টিকা দেওয়ার কথা বলল না। আমাদের করোনা টেস্ট করানো উচিত, সে কথাও বলল না!’’
এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছে মক্কা। কোভিডের টিকা নিয়েছেন, শুধুমাত্র এমন পুণ্যার্থীদেরই মক্কা আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রমজান মাসের প্রথম দিন, মঙ্গলবার, মক্কার গ্র্যান্ড মস্কে প্রবেশ করেন পুণ্যার্থীরা। টিকা নেওয়া থাকলেও মাস্কে মুখ ঢাকা ছিল সকলেরই। তুরস্ক আবার রমজানে মাসে দেশ জুড়ে আংশিক লকডাউন জারি করেছে। প্রেসিডেন্ট এর্দোগান জানিয়েছেন, রমজান মাসের প্রথম দু’সপ্তাহে এই কড়াকড়ি চলবে। সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রথম পাঁচে রয়েছে তুরস্ক। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৯,১৮৭ জন সংক্রমিত হয়েছেন। ২৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ, অন্তঃসত্ত্বা সরকারি কর্মীদের কাজের সময় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি সংস্থাগুলোকে বাড়ি থেকে কাজ চালানোর কথা বলা হয়েছে।