নির্জন টাইমস স্কোয়ার। ছবি: রয়টার্স
হাডসন নদী এখানে মিশে গিয়েছে আটলান্টিকে। আর তার পাড়েই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ছবির মতো শহর নিউইয়র্ক। আকাশকে মাটিতে নেমে আসার হাতছানি দিচ্ছে হাইরাইজ বিল্ডিংগুলি। রাত নামলেও, এখানে দিনের আলো যেন নেভে না। আমেরিকানরা গর্ব করে বলে, পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠ শহর নিউ ইয়র্ক। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে তার চেহারাটা নাটকীয় ভাবে বদলে গিয়েছে। করোনার আতঙ্ক এখন গ্রাস করেছে এক সময় সর্বদা জেগে থাকা গোটা নিউইয়র্ককে। ‘মৃত্যুপুরী’তে বাস করার অভিজ্ঞতা কেমন তা তুলে ধরেছেন নিউইয়র্কের দুই প্রেমিক-প্রেমিকা।
নিউইয়র্কের ব্রুকলিন অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা বছর আটাশের অ্যালিক্স মন্টেলিওন ও তাঁর প্রেমিক মার্ক কজলো। শহরের অবস্থার কথা স্কাইপে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন তাঁরা। বাইরে বেরোতে পারছেন না তাঁরা। তাই প্রিয় শহরটা এই সময়ে কেমন আছে, তা জানতে জানালা খোলা রেখে দিয়েছেন তাঁরা। মন্টেলিওন বলছেন, ‘‘আমরা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বিহঙ্গ দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি শহরটাকে।’’ উইকওফ হাইটস মেডিক্যাল সেন্টারে যা ঘটছে তা-ও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন মন্টেলিওন ও কজলো। তার বর্ণনা দিতে গিয়ে মন্টেলিওন বলেন, ‘‘আমরা শুনতে পাচ্ছি বাইরে খুব চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছে যা থেকেই ধারণা করতে পারি, ভিতরের পরিস্থিতি কতটা খারাপ। কত শব ওখান থেকে বেরিয়ে এল তা গোনা এখন ছেড়ে দিয়েছি। এটা খুবই ভয়াবহ দৃশ্য। কিন্তু এটাই বাস্তব।’’
১৯ বছর আগে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ভয়াবহ জঙ্গি হানা দেখেছিল এই শহর। আল কায়দার সেই বিমান হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ২ হাজার ৯৭৭ জনের। সেই হামলার জবাব দিয়েছে পেন্টাগন। কিন্তু এই শত্রু যে অদৃশ্য! শহরের সেন্ট্রাল পার্ক-সহ বিভিন্ন জায়গায় হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। আর তার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রেফ্রিজারেটরের ব্যবস্থা-সহ শববাহী ট্রাক। মন্টেলিওন ও কজলো বলছেন, এ শহরের সঙ্গে এ ছবি বড়ই বেমানান। গোটা ঘটনাটাই ধরা পড়েছে তাঁদের দু’জনের চোখে।
উইকঅফ হাইটস মেডিক্যাল সেন্টার থেকে সরানো হচ্ছে দেহ। ছবি: এএফপি
আরও পড়ুন: ‘এমন অবস্থাতেই মজবুত হয় বন্ধুত্ব’, ট্রাম্পের ধন্যবাদের জবাবে মোদী
মন্টেলিওন বলছেন, গত সপ্তাহে কজলো কুকুরকে নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছিল। সেখান থেকে তিনি মন্টেলিওনকে ফোন করে জানান যে দু’জন চিকিৎসক সেখানে ট্রাক আসার কথা বলছেন। এর পরই মন্টেলিওন জানালা খুলে সেই দৃশ্য দেখতে পান। এর পর দিন সকালে উঠে তাঁরা দেখতে পান, রেফ্রিজারেটর ব্যবস্থা-সহ দুটি ট্রাক ঢোকার জন্য র্যাম্প তৈরি করছেন কর্মীরা। মন্টেলিওন জানাচ্ছেন, ‘‘ওরা যেটা ফোনে বলছিলেন, সেটাই গোটা শহর জুড়ে ঘটতে চলেছিল। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এল সারি সারি দেহ।’’
চার পাশে হতাশার ছবি। তবে এর মধ্যেও বেঁচে রয়েছে নানা সম্পর্ক। সেই দৃশ্যও ধরা পড়েছে। আশপাশের মানুষদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন উইকঅফ হাইটস মেডিক্যাল সেন্টারের প্রধান র্যামন রডরিগেজ। তাঁর প্রশংসা করেছেন মন্টেলিওন। তাঁর দাবি, ‘‘প্রতিদিন আমার আত্মীয় ও শহরকর্মীরা আমাদের এই শহর ছাড়তে বলছে। তাঁরা মনে করছেন, এ শহর এখন আমাদের জন্য ঠিক নয়।’’ নিউইয়র্ক ‘আশাবাদী শহর’, এ কথা বিশ্বাস করে শহরের বাসিন্দারা। তাতে ভরসা রাখছেন মন্টেলিওন ও কজলো-ও।
আরও পড়ুন: মেয়াদ বাড়লে কষ্ট করে চালান, বললেন মমতা
এখন করোনা সংক্রমণের ভরকেন্দ্র আমেরিকা। আক্রান্তের সংখ্যাটা চোখ কপালে তোলার মতো। সারা দেশে ইতিমধ্যেই ৪ লক্ষ ৩২ হাজার মানুষ করোনার শিকার হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের। এর মধ্যে নিউইয়র্কেই মারা গিয়েছেন সাড়ে চার হাজারের বেশি মানুষ।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)