Britain King Coronation

রানির মুকুটে নেই কোহিনুর, মহা ধুমধামে রাজ্যাভিষেক চার্লসের, ভারতের প্রতিনিধি হয়ে হাজির কেবল ধনখড়

রানি ক্যামিলা অভিষেক অনুষ্ঠানে এ বার যে মুকুটটি পরছেন, সেটি ১১২ বছরের পুরনো। ১৯১১ সালের রাজ্যাভিষেকে রানি মেরি এই মুকুট পরেছিলেন। তার পর মুকুটটি উঠছে রানি ক্যামিলার মাথায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

লন্ডন শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৩ ১৩:০৭
Share:

ব্রিটেনে রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে রাজা তৃতীয় চার্লস এবং রানি ক্যামিলা। ছবি: রয়টার্স।

৭০ বছর পর ব্রিটেনের সিংহাসনে বসছেন নতুন রাজা। চুয়াত্তর বছর বয়সে পৌঁছে তিনি হাতে তুলে নেবেন রাজদণ্ড। মহা ধুমধামে রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেকের আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে সারা দিন নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন রাজা এবং তাঁর সিংহাসনকে ‘স্বীকৃতি’ দেওয়া হবে। রাজতন্ত্রের উদ্‌যাপনে মেতে উঠেছে বাকিংহাম প্যালেস। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসনিক প্রধান, রাজার অনুষ্ঠানে বাদ নেই কেউ।

Advertisement

১৯৫৩ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেক অনুষ্ঠানের পর তৃতীয় চার্লসের এই রাজ্যাভিষেক। অভিষেক অনুষ্ঠান উপলক্ষে গোটা দেশেই রাজকীয় আয়োজন। আমন্ত্রিতের সংখ্যা প্রায় দু’হাজার। লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে শনিবার সকাল সকাল আমন্ত্রিতেরা হাজির হয়ে গিয়েছেন। বেলা ১১টার আগেই বাকিংহাম প্যালেস থেকে ডায়মন্ড জুবিলি স্টেট কোচে চেপে অ্যাবিতে পৌঁছে গিয়েছেন রাজা তৃতীয় চার্লস এবং রানি ক্যামিলা।

ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে টানা দু’ঘণ্টা রাজার অভিষেক অনুষ্ঠান চলবে। ব্রিটেনের পতাকা হাতে শোভাযাত্রার নেতৃত্বে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক এবং তাঁর স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি। অনুষ্ঠান শেষে রাজা-রানি ফিরে যাবেন বাকিংহামে।

Advertisement

ভারত কী ভাবে দেখছে এই রাজ্যাভিষেককে? অনেকে বলছেন, এই অনুষ্ঠানে প্রতিনিধি নির্বাচনই তার পরিচায়ক। প্রসঙ্গত, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেক অনুষ্ঠানে ভারত থেকে হাজির হয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু। আর এখনকার ভারত সরকার এই অনুষ্ঠানে প্রতিনিধি হিসাবে পাঠিয়েছে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়কে। চার্লসের রাজ্যাভিষেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আমন্ত্রিত থাকলেও তাঁরা যেতে পারেননি। পরিবর্ত হিসাবে থাকছেন ধনখড়। বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল সস্ত্রীক দু’দিনের সফরে ইংল্যান্ডে গিয়েছেন। বাংলার মনে থাকবে, রাজ্যপাল থাকাকালীন রাজ্য সরকার অয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না-পেয়ে ‘ক্ষুব্ধ’ ধনখড় প্রকাশ্যেই জানাতেন, তিনি ‘অপমানিত’। সে বাবদ তাঁকে নিয়ে অনেক রঙ্গ-রসিকতাও চালু হয়েছিল তখন। কিন্তু এ বার ইংল্যান্ডের রাজার রাজ্যাভিষেকে রয়েছেন তিনি। রসিকতা করে অনেকে বলছেন, অতীতে দিদির করা সব ‘অপমান’ মোদীর সুবাদে সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন ধনখড়। ।

ঘটনাচক্রে, ব্রিটেনের রাজ্যাভিষেকে রানির মাথায় থাকছে না কোহিনুর। রানি ক্যামিলা অভিষেক অনুষ্ঠানে যে মুকুটটি পরছেন, তা ১১২ বছরের পুরনো। ১৯১১ সালের রাজ্যাভিষেকে রানি মেরি এই মুকুট পরেছিলেন। তার পর মুকুটটি উঠছে রানি ক্যামিলার মাথায়। এতে কোহিনুর নেই। রাজা তৃতীয় চার্লসের মাথায় উঠবে সেন্ট এডওয়ার্ডের রাজমুকুট।

চার্লসের বয়স ৭৪ বছর। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পরেই তিনি ব্রিটেনের রাজা হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর রাজত্বের ‘আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি’ মিলছে শনিবার। ৭৪ বছরের রাজার অভিষেক উপলক্ষে দেশে তিন দিন ধরে নানা উৎসব পালিত হবে। রাজার সম্মানে শনিবারের পর রবিবারও দেশ জুড়ে হবে ভোজসভা। ১০, ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে পার্টির আয়োজন করবেন প্রধানমন্ত্রী সুনক।

রবিবার উইন্ডসর প্রাসাদে রাজার অভিষেকের কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে উপস্থিতি থাকবে পপ তারকা কেটি পেরি, হলিউড অভিনেতা টম ক্রুজ়ের। ভারত থেকে সেই কনসার্টে যাবেন অভিনেত্রী সোনম কপূর। যিনি অভিনয়ের চেয়ে বেশি খ্যাত তাঁর সাজপোশাকের কারণে।

রাজার অভিষেকে কত খরচ হচ্ছে, আনুষ্ঠানিক ভাবে তা জানায়নি বাকিংহাম প্যালেস। তবে বিবিসি জানিয়েছে, সব মিলিয়ে খরচ প্রায় ৫০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকা। গত রাজ্যাভিষেকের চেয়ে এই খরচের পরিমাণ স্বাভাবিক ভাবেই অনেক বেশি। যদিও রাজা নিজে নাকি অতিরিক্ত ধুমধামের পক্ষপাতী ছিলেন না। তিনি ‘ছোট’ এবং ‘বাহুল্যবর্জিত’ অনুষ্ঠানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন সরকারই রাজ্যাভিষেকের খরচ বহন করে। অর্থাৎ, পরোক্ষ ভাবে সাধারণ নাগরিক তথা করদাতাদের টাকাতেই এই রাজসূয় যজ্ঞ। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ‘বৃদ্ধ’ রাজার অভিষেক নিয়ে এই মাতামাতি এবং শুধুমাত্র পরম্পরা এবং ঐতিহ্যবহনের স্বার্থে এই অর্থনৈতিক ব্যয় কতটা যুক্তিযুক্ত। তবে ৭০ বছর আগে ব্রিটেনের রাজার রাজ্যাভিষেকে আরও ধুমধাম হয়েছিল। সে বছর নাকি শুধু আমন্ত্রিতের সংখ্যাই ছিল ৮ হাজার। অনুষ্ঠান চলেছিল টানা ৪ ঘণ্টা।

সময় বদলেছে, আধুনিকতার দিকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে সভ্যতা। ব্রিটেনে রাজার রাজপাট আছে ঠিকই। কিন্তু রাজার সম্মান জাতীয় সঙ্গীতের কয়েক কলিতেই সীমাবদ্ধ। তৃতীয় চার্লসের অভিষেক তাই বিশ্ব রাজনীতিতেও তেমন গুরুত্ব বহন করছে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে উপরাষ্ট্রপতিকে পাঠানোর ‘দায়সারা’ সিদ্ধান্তে কি সেই গুরুত্বহীনতারই প্রতিফলন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement