গুরুপতবন্ত সিংহ পন্নুন। —ফাইল চিত্র।
খলিস্তানি জঙ্গি গুরুপতবন্ত সিংহ পন্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্র ভারত ও আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্কে তিক্ততা ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন আমেরিকান কংগ্রেসের ভারতীয় বংশোদ্ভূত এমপি-রা। পাঁচজন এমপি একটি বিবৃতিতে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। আর অভিযোগ নিয়ে পদক্ষেপ না করলে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে বিরাট ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আমেরিকান কংগ্রেসের ভারতীয় বংশোদ্ভূত পাঁচ এমপি— অমি বেরা, পামেলা জয়পাল, রো খন্না, রাজা কৃষ্ণমূর্তি ও শ্রী থানেদার গত কাল একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, পন্নুনকে হত্যার চেষ্টার ‘যে অভিযোগ উঠেছে, তা গভীর ভাবে উদ্বেগজনক’। পন্নুনকে হত্যা করতে ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ নিখিল গুপ্তের বিরুদ্ধে উঠেছে, সে বিষয়ে জো বাইডেন প্রশাসন বিচার বিভাগের সামনে গোপন বক্তব্য পেশ করার পরই এই এমপি-রা এই বিবৃতি জারি করেছেন।
এই এমপি-রা বলেছেন, ‘‘ভারত ও আমেরিকার অংশীদারি দু’দেশের জনগণের জীবনেই অর্থবহ প্রভাব ফেলেছে। তবে আমরা চিন্তিত যে অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ না করলে এই কূটনৈতিক সম্পর্কে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।’’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘ভারতের উচিত পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা— যারা দোষী, তাদের শাস্তি দেওয়া। ভারতীয় আধিকারিকেরা দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা জরুরি এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে তা নিয়েও আশ্বাস দেওয়া উচিত ভারতের।’’ পন্নুনকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগকে খতিয়ে দেখতে নয়াদিল্লির তরফে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়ার ঘোষণাকে অবশ্য স্বাগত জানিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এমপি-রা।
গত ২৯ নভেম্বর আমেরিকার তদন্তকারীরা নিখিল গুপ্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন, পন্নুনকে হত্যা করার জন্য তিনি সম্ভাব্য ঘাতককে এক লক্ষ ডলার দিতে সম্মত হয়েছিলেন। ১৫ হাজার ডলার অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সম্ভাব্য ঘাতকের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য নিখিল যাকে বেছে নিয়েছিলেন, তিনি আসলে আমেরিকার আইনরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি। ফলে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। নয়াদিল্লির তরফে অবশ্য প্রথম থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পন্নুনকে হত্যা করতে তথাকথিত ষড়যন্ত্রে ভারতের কোনও ভূমিকাই নেই।
এই টানাপড়েনের মধ্যেই নিখিল গুপ্তের পরিবারের পক্ষে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানানো হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ভাবে গুপ্তের নাগরিক অধিকার হরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রাগ বিমানবন্দরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি কারণ ছাড়াই গুপ্তকে আটক করেন। তাঁকে জোর করে একটি গাড়িতে বসানো হয়। ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ চলে তিন ঘণ্টা ধরে। তবে নিখিল গুপ্তকে আটক বা গ্রেফতারি যা-ই করা হোক— চেক প্রজাতন্ত্রের সরকার বিষয়টি ভারতীয় দূতাবাসকে জানায়নি। ফলে গোটা বিষয়টিতে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, গুপ্তের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিস থাকার কথা ভিত্তিহীন। কারণ, এর আগে দিল্লি বা তুরস্কের বিমানবন্দরে তাঁকে আটকানো হয়নি।