ছেলে ও মেয়েদের শ্রেণিকক্ষ হতে হবে আলাদা। ফাইল চিত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন আফগানিস্তানের মেয়েরা। স্নাতকোত্তরের পড়াশোনায় কোনও বাধা নেই। তবে ছেলে ও মেয়েদের শ্রেণিকক্ষ হতে হবে আলাদা। ‘ইসলামি পোশাক’ পরাটাও বাধ্যতামূলক। আজ এই কথা জানিয়েছেন তালিবানের কার্যনির্বাহী উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী আব্দুল বাকি হক্কানি।
কাবুল দখলের পরে তালিবান দাবি করেছিল, এখন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক পাল্টেছে। যদিও কয়েক দিন আগেও কাবুলের রাস্তায় মেয়েদের মিছিলে চাবুক চালিয়েছে তারা। নয়া মন্ত্রিসভাতেও মহিলাদের কোনও উপস্থিতি নেই। নব্বইয়ের দশকের তালিবানি শাসনে আট বছর বয়স হওয়ার পরেই মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেত। শিক্ষা বলতে ছিল ধর্মগ্রন্থ পাঠের জন্য প্রয়োজনীয় অক্ষর পরিচয়টুকুই। হক্কানি অবশ্য এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ‘‘২০ বছর আগেকার সময়টা আর ফিরিয়ে আনতে চাই না আমরা। যা রয়েছে, সেখান থেকেই শুরু করব।’’
তবে তিনটি বিষয় খোলাখুলি জানিয়ে দেন তালিব মন্ত্রী। প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয়ে পোশাকবিধি বাধ্যতামূলক। মেয়েদের হিজাব পরতেই হবে। তবে শুধু মাথা ঢাকলেই চলবে, না কি বোরখায় আপাদমস্তক ঢেকে রাখতে হবে— তা স্পষ্ট করেননি হক্কানি। দ্বিতীয়ত, লিঙ্গের ভিত্তিতে ভাগ হবে শ্রেণিকক্ষ। হক্কানি বলেন, ‘‘ছেলে ও মেয়েদের একসঙ্গে পড়াশোনা করা চলবে না। আমরা সহশিক্ষার অনুমতি দেব না।’’ তৃতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি পর্যালোচনা করা হবে বলে জানান তিনি। এই বিষয়টিও ব্যাখ্যা করা হয়নি। তবে অতীতে সঙ্গীত ও শিল্পকলা নিষিদ্ধ করেছিল তালিবান। এ বারেও তেমন কিছু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বস্তুত, বহু আফগান সঙ্গীত ও যন্ত্রশিল্পী ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পাকিস্তানে। যাঁরা পালাননি, তাঁরা অনেকেই নিজেদের বাদ্যযন্ত্রগুলো লুকিয়ে ফেলেছেন। তালিবান এ বারও গানবাজনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেয় কি না, সেটা দেখে নিতে চাইছেন তাঁরা। আফগান গায়ক পাসুন মুনাবরের যদিও অত ভরসা নেই নয়া শাসকদের উপরে। সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা যদি এই পেশা না ছাড়ি, তালিবান আমাদের ছাড়বে না। সব অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছি।’’ আজমল নামে আর এক আফগান গায়ক চলে গিয়েছেন পেশোয়ারে। তিনি বলছেন, ‘‘তালিবানের সঙ্গে শত্রুতা নেই। তাদেরও ভাই বলে মনে করি। কিন্তু ওরা আমাদের কাজ পছন্দ করে না।’’ পাক ও আফগান শিল্পীদের নিয়ে অনেকগুলি অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল কাবুল, জলালাবাদ-সহ আফগানিস্তানের কয়েকটি শহরে। তালিবান ক্ষমতা দখলের পরে সে সবই বাতিল হয়েছে। আফগান সঙ্গীত নিয়ে পাকিস্তানে যাঁরা কাজ করতেন, তাঁদেরও অনেকের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চূড়ান্ত ক্ষতি ও অনিশ্চয়তায় ভুগছে আফগান সঙ্গীতজগৎ।
একাধিক রাষ্ট্রের নেপথ্য চাপের জেরে ৯/১১ তারিখে নতুন সরকারের সূচনার অনুষ্ঠান করেনি তালিবান। তবে গত কাল কাবুলে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে তালিবানের পতাকা তুলেছেন কার্যনির্বাহী প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ হাসান আখুন্দ। তালিবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের মাল্টিমিডিয়া শাখার প্রধান আহমদুল্লা মুত্তাকি জানিয়েছেন, অনাড়ম্বর ওই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই নতুন সরকার কাজ শুরু করেছে। বিশেষ সূত্র উদ্ধৃত করে ইরানের সংবাদ সংস্থা এফএআরএস জানিয়েছে, পঞ্জশির প্রদেশের প্রধান রাস্তাঘাটের ৭০ শতাংশই কব্জা করে রেখেছে তালিবান। কিন্তু পঞ্জশিরের উপত্যকাগুলিতে বিশেষ ঢুকতে পারেনি তারা। সেখানে এখনও আহমেদ মাসুদের ন্যাশনাল রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্টের আধিপত্য। ওই সূত্রটির দাবি, মাসুদ এখনও আফগানিস্তান ছাড়েননি। তিনি তুরস্ক বা অন্য কোনও দেশে চলে গিয়েছেন বলে যে গুজব শোনা গিয়েছিল, তা সত্যি নয়। মাসুদ পঞ্জশিরেই নিজের ঘাঁটিতে আছেন এবং উপত্যকার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগও রয়েছে।
ইতিমধ্যে পাকিস্তানের একটি সংবাদপত্রকে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তালিবানের প্রধান মুখপাত্র জ়বিউল্লা মুজাহিদ। সাক্ষাৎকারে জ়বিউল্লা বলেছেন, যুদ্ধ চলাকালীন শত্রুদের নাকের ডগায় ‘ভূতের মতো’ ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু কেউ তাঁকে ধরতে পারেনি। জ়বিউল্লা জানান, উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের নৌশেরার হক্কানিয়া মাদ্রাসায় পড়েছেন তিনি। ‘তালিবান বিশ্ববিদ্যালয়’ বা ‘জেহাদ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামেই দুনিয়ায় কুখ্যাত ওই মাদ্রাসাটি। জ়বিউল্লা বলেছেন, ‘‘আমেরিকান এবং আফগান বাহিনী ভাবত, আসলে জ়বিউল্লা বলে কেউ নেই। আমাকে ভূত ভাবতে শুরু করেছিল। এতে আখেরে লাভই হয়েছে। আমি অনেক বার ওদের ফাঁকি দিয়েছি। কাবুলে সবার নাকের ডগায় ছিলাম। গোটা দেশ চষে বেড়িয়েছি। প্রথম সারির নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি, খবরও পেয়েছি। আমেরিকা আমার খবর জোগাড়ের জন্য স্থানীয় লোকেদের টাকা দিত। কিন্তু আমি কখনও আফগানিস্তান ছাড়ার কথা ভাবিনি।’’