মেক্সিকোয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল প্রকাশ হওয়ার পরে সমর্থকদের অভিবাদন জানাচ্ছেন ক্লডিয়া শেনবাম। সোমবার মেক্সিকো সিটিতে। ছবি: রয়টার্স।
যে দিন লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছিলেন, সেই দিনই সকলে জানত, তাঁর জয় অবশ্যম্ভাবী। নির্বাচনী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত। কোনও বিশেষ বিমান নয়, বাণিজ্যিক উড়ানেই সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে যাতায়াত করেছেন। কথা বলেছেন মানুষের সঙ্গে। সকলেই আভাস পেয়েছিলেন, ইতিহাস গড়তে চলেছেন ৬১ বছর বয়সি ক্লডিয়া শেনবাম। মেক্সিকোর প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন তিনি। শুধু জিতলেন না, এক প্রকার হেলায় হারালেন প্রতিপক্ষকে। প্রধান প্রতিপক্ষের সঙ্গে তাঁর প্রাপ্ত ভোট শতাংশের ফারাক প্রায় ৩০ শতাংশ!
বলা হয়, ক্লডিয়ার রাজনৈতিক-গুরু হলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে ম্যানুয়েল লোপেজ় ওব্রাডর (সংক্ষেপে আমলো)। আমলোর ছেড়ে যাওয়া আসনে বসছেন তাঁর শিষ্যা। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আগামী ছ’বছর ক্লডিয়া যা-ই করুন না কেন, মেক্সিকোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা পুরুষতন্ত্র ভাঙার জন্য ক্লডিয়াকে চিরকাল মনে রাখবে তাঁর দেশ। ক্লডিয়ার অবশ্য আরও পরিচয় রয়েছে। তিনি একই সঙ্গে বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ। এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। তাঁর লেখা অন্তত ১০০টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ ও বই রয়েছে। ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি)-এর সঙ্গেও কাজ করেছেন ক্লডিয়া।
সরকার কী ভাবে পরিচালনা করবেন ক্লডিয়া, সে সম্পর্কে খুব কমই ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। আমলো-র লক্ষ্য ছিল ‘ফোর্থ ট্রান্সফর্মেশন’। সেই চতুর্থ পরিবর্তনের যে স্বপ্নের বাড়ি গড়ছিলেন আমলো, তারই দ্বিতীয় তলাটি তৈরি করবেন ক্লডিয়া। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে এ-টুকুই বলেছেন তিনি। সেটা কী রকম? ‘ফোর্থ ট্রান্সফর্মেশন’-এ দেশবাসীকে পেনশন দেওয়া, পড়ুয়াদের সাহায্য, প্রতিটি পরিবারকে অর্থসাহায্যের প্রকল্প ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়েছে মেক্সিকোয়। অন্তত ৫০ লক্ষ দরিদ্র মানুষ উপকৃত হয়েছেন। কিন্তু তাতেও বহু অঞ্চলে মানুষ সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
সে কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন ক্লডিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘যে পরিবর্তনের কথা আমরা বলছি, তাতে দেশের অর্থনৈতিক শক্তিকে রাজনৈতিক শক্তির থেকে আলাদা করা হবে। অর্থনৈতিক শক্তিরা নিজের রাস্তা চেনে। সরকার কাজ করবে গরিবের জন্য।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘আমলো সেই স্বপ্নের বাড়ির ভিত গঠন করেছেন। একতলা নির্মাণ করছেন। আমি সেই বাড়িরই দ্বিতীয় তলটি নির্মাণ করব।’’
ক্লডিয়ার জয় গোটা দেশের জন্যই বেশ আবেগঘন মুহূর্ত। মেক্সিকোর পুরুষ-শাসিত রাজনীতিতে এক মহিলার এ হেন উত্থান চোখে পড়ার মতো। কাচের অদৃশ্য দেওয়াল ভেঙে চুরমার করেছেন ক্লডিয়া। তবে এই প্রথম নয়। এর আগে মেক্সিকো সিটির প্রথম মহিলা মেয়র হয়েছিলেন তিনি। এ বার তিনি মেক্সিকোর ‘ন্যাশনাল প্যালেস’-এ রাজত্ব করবেন, আগামী ছ’বছরের জন্য।
মেক্সিকোর ইতিহাসে তিনটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন রয়েছে। স্বাধীনতা এসেছে ১৮১০ সালে, সংস্কার-যুদ্ধ (গির্জা ও সরকারকে আলাদা করা) হয়েছে ১৮৫৮ সালে, মেক্সিকোর বিপ্লব ঘটেছিল ১৯১০ সালে। এর পরে দেশে যে পরিবর্তন আনতে চাইছেন আমলো ও তাঁর পূর্বসুরি, সেটিই হল ‘ফোর্থ ট্রান্সফর্মেশন’। বিরোধীদের অবশ্য দাবি, এ সবই আমলো ও ক্লডিয়ার ‘মানসিক ভ্রম’। লম্বা-চওড়া কথা বলে নজর কাড়ার চেষ্টা। কারণ ‘ফোর্থ ট্রান্সফর্মেশন’-এর নাম দিয়ে যে পথে সামাজিক সমস্যা মেটানোর কথা বলছেন ওঁরা, তা সমস্যাগুলির অতি-সরলীকরণ করে ফেলা হচ্ছে।