পুরনো পথেই প্যাঁচ কষছে চিন।
মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা কিংবা পরমাণু জ্বালানি সরবরাহকারী দেশ (এনএসজি) হিসেবে ভারতের অন্তর্ভূক্তি— সব বিষয়েই দিল্লির প্রস্তাবে এত দিন জল ঢেলে দিচ্ছিল বেজিং। সেই প্রয়াস এখনও একই ভাবে চালিয়ে যেতে চাইছে তারা। কেননা, চিনের পক্ষ থেকে আজ স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী শুক্রবার ভিয়েনায় এনএসজি-র বিষয় নিয়ে যে বৈঠক রয়েছে, সেখানে তাদের পুরনো অবস্থান থেকে সরে আসবে না বেজিং। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লিউ কাং এ কথা জানিয়েছেন। অর্থাৎ, ভারত যে হেতু পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) সই করে নি, তাই দিল্লিকে পরমাণু জ্বালানি সরবরাহকারী দেশের মর্যাদা দিতে রাজি নয় বেজিং।
আগামী ১১ ও ১২ নভেম্বর ভিয়েনার বৈঠকে এনপিটিতে সই করেনি, এমন দেশগুলিকে নতুন ভাবে এনএসজিতে সামিল করার বিষয়ে আলোচনা হবে। ভারত ও পাকিস্তানের তরফে এনএসজিতে অন্তর্ভূক্তির আবেদনপত্র নিয়ে বৈঠকে আলোচনার সম্ভাবনা। এ ব্যাপারে নতুন নিয়ম তৈরিরও চেষ্টা হতে পারে বলে কূটনৈতিক মহলের খবর। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র আজ ইঙ্গিত দিয়েছেন, নতুন নিয়ম হলে তখন সেই অনুযায়ী তারা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারেন। তবে তিনি জানান, এই মুহূর্তে চিন মনে করে, ভারতকে পরমাণু জ্বালানি সরবরাহকারী দেশের মর্যাদা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কেননা, পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধ চুক্তিতে সই করেনি দিল্লি।
এনএসজিতে মোট সদস্য দেশের সংখ্যা ৪৮। আমেরিকা-সহ অধিকাংশ দেশই চাইছে ভারত এই তালিকায় জুড়ে যাক। কিন্তু পাকিস্তানকে এনএসজিতে সামিল করতে চায় না তারা। সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করতে ইসলামাবাদের অনীহার কারণেই এনএসজি-র দেশগুলির কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তানের আবেদনপত্র নিয়েও এ বার বিচার করা হবে ভিয়েনার বৈঠকে। আর কূটনীতিকদের মতে, পাকিস্তানকে মদত দিতে পর্দার আড়ালে রয়েছে বেজিংয়ের হাত।
এনএসজির বৈঠকে একটি সদস্য দেশের আপত্তি থাকলেই নতুন কোনও দেশকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয় না। গত বার চিনের আপত্তিতেই দিল্লির সম্ভাবনা খারিজ হয়েছিল। এ বারও সেই চেষ্টাই করছে বেজিং।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জট ছাড়াতে দিন কয়েক আগেই হায়দরাবাদে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও চিনের স্টেট কাউন্সিলার ইয়াং জেইচি বৈঠকে বসেছিলেন। তার পরেও যে বরফ গলেনি, চিনা মুখপাত্রের কথাতেই তা স্পষ্ট। জইশ প্রধান মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী চিহ্নিত করতে বেজিংয়ের অবস্থান নিয়ে ভারতের অস্বস্তি রয়েছে। এ নিয়ে আজ চিনা মুখপাত্রকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকরা। স্পষ্ট জবাব না দিয়ে লিউ বলেন, দ্বিপাক্ষিক বেশ কিছু বিষয় নিয়ে দূ’দেশের আলোচনা হয়েছে।