নৈশভোজে। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিকে পিনিয়া নিয়েতোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মেক্সিকো সিটির একটি রেস্তোরাঁয়। ছবি: পিটিআই।
দিল্লিকে পুরোপুরি সমর্থন করেছে হোয়াইট হাউস। কিন্তু পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী বা এনএসজিতে ভারতের অন্তর্ভুক্তি রুখতে মাঠে নেমে পড়ল চিন।
এনএসজির সদস্যপদের জন্য চলতি সফরে আগেই সুইৎজারল্যান্ড ও আমেরিকাকে পাশে পেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। মেক্সিকো পৌঁছে আজ তাদেরও সমর্থন কুড়িয়ে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ভিয়েনায় এ দিন এনএসজি গোষ্ঠীর এক বৈঠকে ভারতের সম্ভাবনা ভেস্তে দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে চিন। ভারতের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্ন নিয়ে ২০ জুন সোলে এনএসজি-র প্লেনারি বৈঠক বসবে। কিন্তু সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, ওই গোষ্ঠীর ৪৮ সদস্যের মধ্যে ভারতকে আটকাতে চিনের পাশে থাকছে নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রিয়ার মতো দেশগুলি। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে পাকিস্তানও এনএসজির সদস্য হওয়ার আবেদন জমা দেওয়ায়। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, চিন ভারতের প্রস্তাব তখনই সমর্থন করবে যদি ইসলামাবাদকেও একই মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে ভিয়েনার বৈঠকের পরে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেন, ‘‘এনএসজিতে অন্তর্ভুক্তি একটি প্রক্রিয়া। তবে ভারত নিয়ে অধিকাংশ দেশই ইতিবাচক মনোভাব নিচ্ছে।’’
১৯৭৪ সালে ভারতের পরমাণু পরীক্ষার পরে বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়ার জেরে গঠিত হয়েছিল এনএসজি। পরমাণু জ্বালানি সরবরাহকারী ৪৮ সদস্যের এই গোষ্ঠী পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। এনএসজি-র নিয়ম হল, কোনও দেশের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব সর্বসম্মতিতেই পাশ হওয়া দরকার। ফলে বেজিংয়ের পদক্ষেপ চাপে ফেলেছে ভারতকে। তবে নয়াদিল্লির ভরসা আমেরিকা। কেননা, মার্কিন প্রশাসনের পক্ষে বিদেশসচিব জন কেরি এনএসজি গোষ্ঠীর দেশগুলির কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন যাতে তারা ভারতকে নিয়ে সর্বসম্মতির পথ প্রশস্ত করেন। ভারত পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধ চুক্তিতে সই করেনি। তাই নয়াদিল্লিকে এনএসজিতে নিতে বিরোধিতা রয়েছে কোনও কোনও দেশের। আর পরমাণু প্রশ্নে পাকিস্তানকে নিয়ে সন্দেহ গোটা বিশ্বজুড়ে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর পঞ্চদেশীয় সফর আজ শেষ হয়েছে। এবং সোলের আসন্ন বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে নয়াদিল্লি।
তবে চাপের মধ্যেও চেষ্টার খামতি রাখেননি মোদী। আজ মেক্সিকোর কাছ থেকে এনএসজি অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে সমর্থন জোগাড় করে নেন তিনি। মোদীর সফরের সময়ে পরমাণু-সমর্থন ছাড়াও সম্পর্কের উষ্ণতা দেখাতে এক নজিরবিহীন ‘ড্রাইভ’ করেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট এনরিকে পিনিয়া নিয়েতো। গুরুগম্ভীর কূটনীতির শিকল ভেঙে তিনি নিজেই গাড়ি চালিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যান বিশুদ্ধ নিরামিষ একটি মেক্সিকান রেস্তোরাঁতে! নিরামিষ পদ মেক্সিকো সিটিতে খুব সুলভ নয়। কিন্তু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর খাদ্যাভাস আগে থেকে জেনে নিয়ে বিখ্যাত ‘কিনটোনিল’ রেস্তোরাঁটিই বেছে নেন তিনি। গত কাল মার্কিন সেনেটের যৌথ অধিবেশনে ঐতিহাসিক অভ্যর্থনা পেয়েছেন মোদী। তার আগে আন্তর্জাতিক ক্ষেপণাস্ত্র ক্লাবের সদস্যপদ নিশ্চিত করেছেন তিনি। সেই ফুরফুরে কূটনৈতিক রেশ নিয়েই শেষ গন্তব্য মেক্সিকোতে এসে পৌঁছোন মোদী। প্রথমে দু’দেশের নেতার শীর্ষ বৈঠক। তার পরেই পিনিয়া নিয়েতো গাড়িতে তাঁকে পাশে বসিয়ে নিয়ে যান সেখানকার অভিজাত নিরামিষ রেস্তোরাঁ ‘কিনটোনিল’-এ। নৈশভোজের টেবিলে বসেও ঘরোয়া ভাবে গড়াতে থাকে আলোচনা। সঙ্গে মেক্সিকোর বিশেষ পদ কালো বিন দিয়ে তৈরি ‘ট্যাকো’!
এই চিত্রনাট্যের মধ্যেই পিনিয়া নিয়েতো বলেছেন, ‘‘এনএসজি-তে ভারতের যোগদানের আগ্রহকে মেক্সিকো যথেষ্ট স্বীকৃতি দিচ্ছে।’’ প্রেসিডেন্টের মন্তব্য, ‘‘পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ও সম্প্রসারণের বিরোধিতার প্রশ্নে মোদীর ভূমিকাকে আমরা সমর্থন করি।’’ মেক্সিকোর এই সমর্থন তাদের নীতির পক্ষে একটি ঐতিহাসিক বদল। বহুকাল ধরেই তারা পরমাণু অস্ত্র সম্প্রসারণের বিরোধী। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা জানাচ্ছেন, মেক্সিকোর সমর্থন এক দিনে আদায় করা সম্ভব হয়নি। নিজেদের পরমাণু রেকর্ডকে সে দেশে প্রতিষ্ঠা করার বিষয় তো ছিলই। এ কাজে ওবামা প্রশাসনও সাহায্য করেছে ভারতকে।