পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীতে (এনএসজি) পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে পরোক্ষে হলেও আসরে নামল চিন। তবে সেইসঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভারতের সদস্যপদ নিয়ে সুর কিছুটা নরম করেছে বেজিং। চিনা বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, তারা কোনও নির্দিষ্ট দেশের সদস্য হওয়ার বিরোধী নয়। বরং নতুন সদস্য নেওয়ার বিষয়ে আলোচনার দরজা খোলাই আছে।
গত কাল পর্যন্তও ভারতের সদস্যপদের সামনে প্রাচীর হয়েই দাঁড়িয়েছিল চিন। বেজিংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সোল বৈঠকের কর্মসূচিতে ভারত-সহ নয়া সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিই নেই। কিন্তু আজ সোল বৈঠকে ভারতের সদস্যপদের আবেদন সমর্থনের জন্য এনএসজি-র বাকি সদস্যদের অনুরোধ করে আমেরিকা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রায় তখনই চিনের সুরও কিছুটা বদলে যায়। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চুনইং আজ বলেন, ‘‘আমরা ভারত বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নই। পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) স্বাক্ষর না করে এনএসজি-র সদস্য হওয়া যায় কি না সেটাই আমাদের বিবেচনার বিষয়। এনপিটি-র সদস্য নয় এমন সদস্যদের জন্য এনএসজিতে আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি।’’ তার পরেই আমেরিকাকে কটাক্ষ করে হুয়া বলেন, ‘‘এনপিটিতে স্বাক্ষর না করে এনএসজি-র সদস্য হওয়া যাবে না, এই নিয়ম আমেরিকারই তৈরি। দেখা যাচ্ছে, আমেরিকা নিয়ম তৈরি করে। চিন নিয়মের মর্যাদা রাখে।’’
এর পাশাপাশি এ দিন ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানকেও সদস্য করার পক্ষে জোর সওয়াল করেছে চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম। তাদের মতে, পাক পরমাণু অস্ত্রের চোরাকারবার করেছিলেন বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খান, পাক সরকার নয়। পরে শাস্তি হিসেবে কাদিরকে গৃহবন্দি করে রেখেছিল ইসলামাবাদ। চিনা সরকারি সংবামাধ্যমের মতে, পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে ভারত সদস্য হলে দিল্লির সমস্যা মিটবে। কিন্তু আরও বড় সমস্যা তৈরি হবে। ভারত ও পাকিস্তানের উচিত একসঙ্গে সদস্য হওয়ার আবেদন করা।
সাউথ ব্লক সূত্রের মতে, চিনের এই সুরবদল অপ্রত্যাশিত নয়। বারাক ওবামা প্রশাসনের তরফে আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তানকে সদস্য করতে মরিয়া চেষ্টা চালাবে চিন। তাই পাকিস্তানের পথে বাধা না হলে দিল্লিরও সমস্যা কমতে পারে। রবিবারই বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ইঙ্গিত দিয়েছেন, দিল্লি ইসলামাবাদের পথে বাধা হবে না।
তবে সোলের প্লেনারি বৈঠকে ভারতের সদস্যপদ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না-ও হতে পারে বলে আজ ফের সতর্ক করে দিয়েছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা। এ দিন পাক পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিদেশনীতি উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘পাকিস্তান সফল ভাবেই ভারতের এনএসজি সদস্য হওয়ার বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে।’’ সাউথ ব্লক সূত্রের মতে, বেজিং-ইসলামাবাদ অক্ষের চাপে সিদ্ধান্ত পিছিয়ে যেতে পারে।
এনএসজি দৌত্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিদেশমন্ত্রী ঠিক কথা বলছেন না বলে দাবি কংগ্রেসের। দলীয় নেতা আনন্দ শর্মার মতে, ‘‘চিন এই বিষয়ে একটি অবস্থান নিয়েছে। সরকারের উচিত সেই বাধা পেরোনোর চেষ্টা করা। অকারণ হইচই করে লাভ নেই।’’