আফগানিস্তান ও নেপালকে জোটে আনতে তৎপর চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই— ফাইল চিত্র।
পুরনো সহযোগী পাকিস্তান তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে নেপাল এবং আফগানিস্তানও। কোভিড পরিস্থিতির মোকাবিলা এবং করোনা-সঙ্কটের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত আর্থিক বৃদ্ধির গতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশকে নিয়ে এবার নতুন অক্ষ গড়ছে চিন। চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই সোমবার তিন দেশের মন্ত্রীদের নিয়ে এ বিষয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন। চিনা বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, চিন ও পাকিস্তানের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যৌথ আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই এই বৈঠক।
চিনা বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওয়াংয়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে নেপালের বিদেশমন্ত্রী প্রদীপকুমার গাওয়ালি এবং আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত বিদেশমন্ত্রী হানিফ আতমার যোগ দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের তরফে ছিলেন অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী মখদুম খুশরো বখতিয়ার।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের আবহে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। এই পরিস্থিতিতে আর্থিক বৃদ্ধির গতি বাড়াতে চার দফা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। পাশাপাশি, চিনের পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বিআরআই (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ)-এ দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশের অংশগ্রহণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন ওয়াং। পাকিস্তান ইতিমধ্যেই চিনের এই প্রকল্পের সক্রিয় অংশীদার হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: ফের চিনের বিরুদ্ধে ‘ডিজিটাল স্ট্রাইক’, নিষিদ্ধ আরও ৪৭ চিনা অ্যাপ
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে চিনা বিদেশমন্ত্রীর পেশ করা চার দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, করোনাভাইরাসের রাজনীতিকরণ এড়ানো এবং দৃঢ় ভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র পাশে দাঁড়ানোর বার্তা। করোনাভাইরাসের ‘উৎস’ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে সন্দেহের নিশানা হয়েছে চিন। পাশাপাশি, হু-র বিরুদ্ধে বেজিংয়ের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি, হু-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক চাপের মোকাবিলার উদ্দেশ্যেই সার্ক-ভুক্ত তিন দেশকে নিয়ে চিন নয়া অক্ষ বানাতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভূমিপূজায় গগৈকে চান অধীর, কটাক্ষ?
বৈঠতে চিনা বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, পাকিস্তানকে পাশে নিয়ে করোনা মোকাবিলায় আফগানিস্তান ও নেপালে সর্বতো ভাবে সহযোগিতা করবে বেজিং। জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তুলতেও সাহায্য করা হবে । করোনার টিকা বাজারের আসার পরে তা পেতেও সহায়তা করা হবে ওই দুই দেশকে। আর তার বদলে চিনের ‘লক্ষ্য’ও বৈঠকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন ওয়াং। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা চিন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডোর (সিপিসি) এবং ট্রান্স হিমালয়ান কানেন্টিভিটি নেটওয়ার্ক (টিএইচসিএন) সম্প্রসারণে সক্রিয় হব। এর ফলে উপকৃত হবে আঞ্চলিক অর্থনীতি।’’ সিপিসিতে আফগানিস্তান এবং টিএইচসিএন-এ নেপালকে জুড়ে নয়াদিল্লির উপর চাপ বাড়াতে দীর্ঘদিন থেকেই সক্রিয় বেজিং। করোনা সঙ্কটকে এবার তারা সুযোগে পরিণত করতে চাইছে বলেই মনে করা হচ্ছে।