ফাইল চিত্র
কোভিড-বিতর্কের শীর্ষে রয়েছে উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি। বিশ্বের একটা বড় অংশের ধারণা, চিনের উহান শহরের এই প্রতিষ্ঠান থেকেই ছড়িয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। চিন অবশ্য তা অস্বীকার করে আসছে গোড়া থেকেই। এ বারে বিজ্ঞানে অবদানের জন্য উহান ইনস্টিটিউটকে সর্বোচ্চ সম্মানে মনোনীত করল চিন।
২০২১ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অসাধারণ অবদানের জন্য ‘চাইনিজ় অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স’ বেছে নিয়েছে উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি-কে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোভিড-১৯ রোধে বিস্তারিত ও শৃঙ্খলা মেনে গবেষণার জন্যই এই স্বীকৃতি। শুধু ইনস্টিটিউটকেই নয়, বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শি ঝেংলি-কে। দেশে তাঁকে ‘ব্যাটওম্যান’ বলা হয়। বিশ্বের বহু বিজ্ঞানীর বিশ্বাস, ঝেংলি-র ল্যাব থেকেই কোনও ভাবে ভাইরাস ছড়িয়েছে। ঝেংলি সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘কী ভাবে প্রমাণ দেব! যার কোনও প্রমাণই থাকার কথা নয়, দুনিয়া ঘুরে তার প্রমাণ নিয়ে আসব কোথা থেকে।’’
এ দিকে চিন যখন সাফল্য উদ্যাপন করছে, গোটা বিশ্ব সন্ত্রস্ত্র করোনাভাইরাসের ডেল্টা স্ট্রেনকে নিয়ে। আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, এটি সব চেয়ে বেশি সংক্রামক ও শক্তিশালী স্ট্রেন। দুর্বল শরীরে এর আক্রমণ ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। বিজ্ঞানীরা আগেই জানিয়েছেন, কোভিড প্রতিষেধক ডেল্টা স্ট্রেনকে রুখতে না-পারলেও, বাড়াবাড়ি হওয়া আটকে দিতে পারে। কিন্তু বহু দেশে টিকাকরণের হার একেবারে কম। আফ্রিকার কিছু দেশে টিকা দেওয়া শুরুই হয়নি। এ সব দেশ যে খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছে হু।
হু-র স্বাস্থ্য ও জরুরি পরিস্থিতি বিষয়ক উদ্যোগের প্রধান মাইক রায়ান স্পষ্টই জানিয়েছেন, স্ট্রেনটি এতটাই সংক্রামক যে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। কোনও রাখঢাক না-করে বলেন, ‘‘যাঁদের শরীর কোনও রোগভোগে দুর্বল হয়ে, তাঁরা সংক্রমিত হলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বেন। হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। এবং মৃত্যুর আশঙ্কা অন্যদের থেকে অনেক বেশি থাকবে।’’ এই কারণে শারীরিক ভাবে দুর্বল বা অন্য কোনও রোগে অসুস্থদের দ্রুত টিকাকরণ সারার আর্জি জানিয়েছেন রায়ান। তাঁর কথায়, ‘‘প্রয়োজনে এমন মানুষদের কোভিড টিকা দান করুন।’’
আজ আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় সংক্রামক-রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউচি-ও ডেল্টা স্ট্রেন সম্পর্কে আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন। একটি সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘এর সংক্রমণ ক্ষমতা অসম্ভব বেশি।’’ এ দিকে, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল প্রথম ডোজ় অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার প্রতিষেধক নেওয়ার পরে দ্বিতীয় ডোজ় মর্ডানার টিকা নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। মিশ্র টিকা নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা চলছে বিভিন্ন দেশে।
সব ধরনের করোনাভাইরাস রুখতে একটি সার্বিক প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা করছে ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, সার্স-কোভ-২-এর পরে আরও করোনাভাইরাস হামলা চালাতে পারে। আপাতত ইঁদুরের উপরে পরীক্ষায় সাফল্য মিলেছে। আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি। একে বলা হচ্ছে, ‘সেকেন্ড-জেনারেশন ভ্যাকসিন’।