চলছে উদ্ধারকার্য। এএফপি-র তোলা ছবি।
প্রায় দেড় দিন কেটে গিয়েছে। তবে এখনও উদ্ধারকাজ খুব একটা এগোয়নি। স্থানীয় সময় সোমবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ৪৫৬ জনকে নিয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে চিনের ইয়াঙ্গসি নদীতে উল্টে যায় প্রমোদতরী ‘ইস্টার স্টার’। ঘূর্ণিঝড়ের কোনও পূর্বাভাস আবহাওয়া দফতরের তরফ থেকে আগে পাওয়া যায়নি কেন, সে বিষয়ে এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত মাত্র ২৬টি মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছেন উদ্ধারকারীরা। আশার কথা, পনেরো জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। নিখোঁজ প্রায় ৪২০।
রাতের খাওয়া সেরে সবেমাত্র শুতে গিয়েছিলেন সবাই। তখনই ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে আটকে পড়ে ইস্টার স্টার। বিপদ মোকাবিলা করার তেমন সময়ও পাননি কেউ। দু’-এক মিনিটের মধ্যেই উল্টে যায় জাহাজটি। প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন জাহাজের নাবিক ও ইঞ্জিনিয়ার। নাবিক বলেছেন, ‘‘বিপদ সঙ্কেত দেওয়ারও কোনও সময় পাইনি।’’ উপগ্রহ চিত্র থেকেও সেই ছবিই স্পষ্ট। দেখা গিয়েছে, ঝড়ের দাপটে হঠাৎ করেই উল্টো দিকে চলতে শুরু করে জাহাজটি। কিন্তু আবহাওয়া দফতর ঘূর্ণিঝড়ের কোনও সঙ্কেত কেন আগে দেয়নি — তা নিয়ে আজ প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। যাত্রীদের আত্মীয়রাও তাঁদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। ‘সাহায্য করুন’ লেখা বিভিন্ন পোস্টার ব্যানার নিয়ে আজ সাংহাইয়ে মিছিল করেছেন তাঁরা। তীর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে ৫০ ফুট গভীর জলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ডুবুরিরা আশা করছেন, জাহাজের ডুবে থাকা অংশে এখনও প্রাণের স্পন্দন মিলতে পারে। ।
পুলিশ, দমকল, সেনাবাহিনী নিয়ে প্রায় চার হাজার জন হাত লাগিয়েছেন উদ্ধারকাজে। তিনটি দলে ভাগ হয়েছেন ডুবুরিরা। এক দল, সন্ধান চালাচ্ছেন জলের উপরের জাহাজের অংশে। জাহাজটির ডুবে থাকা অংশে কেউ বেঁচে আছেন কি না— তা দেখার দায়িত্ব আর এক দলের। অন্য দলটি ইয়াঙ্গসি নদীর স্রোত বরাবর প্রায় ২২০ কিলোমিটার ধরে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকার ফলে উদ্ধারকাজ খুব একটা এগোয়নি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, উদ্ধারকাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে চলেছে উদ্ধারকারী সংস্থা। প্রথমে ভাবা হয়েছিল যন্ত্রের সাহায্যে পুরো জাহাজটিকেই তুলে ফেলা হবে। কিন্তু এখন ভাবা হয়েছে, জাহাজটি ভেঙেই তার ভিতর ঢুকে উদ্ধারকাজ চালানো হবে। এক ডুবুরি বলেছেন, ‘‘আমি তিন বার সাঁতার কেটে এ দিক ও দিক গেলাম। তৃতীয় বারে বুঝতে পারলাম আমার উপরে কিছু একটা রয়েছে।’’ তার পর অন্ধকার কেবিন থেকে উদ্ধার করেছেন আটকে থাকা এক যাত্রীকে। বেঁচে গিয়েছেন চাং হুই। গাইড হিসেবে এই ১৩ দিনের সফরে গিয়েছিলেন হুই। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। কেবিনের জানলা দিয়েও জল চলে আসছিল ভিতরে। বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা অঘটন ঘটবে। কথা শেষ হওয়ার আগেই বিপদটা ঘটল।’’ লাইফ জ্যাকেট পড়ে মাত্র তিরিশ সেকেন্ডের মধ্যেই তিনি বেরিয়ে আসেন কেবিন থেকে। আজ দুপুরেই ৬৫ বছরের এক মহিলা এবং ২১ বছরের এক যুবককেও উদ্ধার করেছেন ডুবুরিরা। যদি তার বাবাও এ ভাবে ফিরে আসেন— সেই আশাতেই রয়েছে তেন চেনচিং। তার বাবা ছিলেন ওই জাহাজের কর্মী। অলৌকিক কিছুই এখন তার শেষ ভরসা।