সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করে পাল্টা প্যাঁচে যুবতী। প্রতীকী ছবি।
কোভিড পরিস্থিতিতে বাড়িতে বসে কাজ করার (ওয়ার্ক ফ্রম হোম) সুযোগ দিয়েছিল অফিস। কিন্তু তা না করে সেই সময়ে অন্য কাজ করার অভিযোগ উঠেছিল এক কর্মীর বিরুদ্ধে। আর সেই অভিযোগেই ওই মহিলা কর্মীকে ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল আদালত। ওই অর্থ তাঁর পুরনো সংস্থাকে দিতে হবে। ঘটনাটি কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার।
দ্য গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই কর্মীর নাম কার্লি বেস। তিনি একটি সংস্থায় হিসাবরক্ষকের কাজ করতেন। তখন কোভিড পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে। বাড়িতে বসে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিল সংস্থাটি। কিন্তু মহিলাকে যে ল্যাপটপটি সংস্থা থেকে দেওয়া হয়েছিল, তাতে একটি স্পাই সফ্টওয়্যার ইনস্টল করে দেওয়া হয়েছিল। আর তার মাধ্যমে কর্মীর গতিবিধির উপর নজর রাখত সংস্থা। সংস্থাটির দাবি, ওই সফ্টওয়্যারে ধরা পড়েছে যে, কার্লি অফিসের সময়ে অফিসের কাজ না করে অন্য কাজ করতেন। আর মাস গেলে পুরো বেতনই নিতেন।
কার্লি হঠাৎই সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে, তাঁকে কিছু না জানিয়েই কাজ থেকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, তাঁর প্রাপ্য টাকাও দেওয়া হয়নি। এই অভিযোগ তুলে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন কার্লি। সংস্থাটির কাছে ৫ হাজার কানাডীয় ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি। কিন্তু সংস্থাটি কার্লির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করে পাল্টা একটি মামলা করে। আদালতের কাছে তারা দাবি করে, কার্লি অফিসের সময় নষ্ট করেছেন। ওই সময় অফিসের কাজ না করে অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন। শুধু তাই নয়, ৫০ ঘণ্টা লগ ইন রেখে নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখার ‘ভান’ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর ল্যাপটপে লাগানো স্পাই সফ্টওয়্যার সমস্ত কিছু প্রকাশ্যে এনেছে।
সংস্থাটি আরও দাবি করেছে যে, কার্লির ল্যাপটপে টাইমক্যাম্প নামে স্পাই সফ্টওয়্যার লাগানো হয়েছিল। তিনি কী কী কাজ করেছেন সব ল্যাপটপে নথিবদ্ধ রয়েছে। কখন তিনি কাজ করেছেন, আর সংস্থাকে কী কী হিসাব দিয়েছেন, তার মধ্যে যে বিস্তর ফারাক তা ধরা পড়েছে ওই সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে। ফলে কার্লি যে সংস্থাকে ‘প্রতারণা’ করেছেন তার প্রমাণ রয়েছে এই স্পাই সফ্টওয়্যারে। যদিও আদালতে কার্লি দাবি করেন ওই সফ্টওয়্যার তাঁর অফিসের কাজ এবং ব্যক্তিগত কাজের সময়ের ফারাক ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু আদালতের কাছে সংস্থাটি পোক্ত প্রমাণ তুলে দেওয়ায়, পাল্টা প্যাঁচে পড়ে যান কার্লি। উল্টে আদালত তাঁকে নির্দেশ দেয়, পুরনো সংস্থাকে ৫ হাজার কানাডীয় ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় ৩ লক্ষ ৪ হাজার ৫২৫ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
কোভিড পরিস্থিতিতে বহু বেসরকারি সংস্থা কর্মীদের জন্য বাড়িতে বসেই কাজের (ওয়ার্ক ফ্রম হোম) ব্যবস্থা করেছিল। গত দু’বছর ধরে বাড়িতে বসে কাজ করার পর কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই, অফিসে এসে কর্মীদের কাজের বিষয়টি ফের চালু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর সুযোগ নিয়ে অনেকেই সময় নষ্ট করেছেন, এমন বিস্তর অভিযোগ, ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। শুধু তাই-ই নয়, বেশ কয়েকটি নামী সংস্থার কর্মীরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অন্য সংস্থাতেও আংশিক সময়ের জন্য কাজ করেছেন, যে ঘটনা ‘মুনলাইটিং’ নামে বেশ পরিচিতি পেয়েছে।