খলিস্তানপন্থী ‘সন্ত্রাসী’ অর্শদীপ সিংহ ওরফে অর্শ ডাল্লা। —ফাইল চিত্র।
কানাডায় ক্রমবর্ধমান খলিস্তান-অস্বস্তির মধ্যেই খানিক স্বস্তি ভারতের। দেশের গোয়েন্দাদের চিন্তা এবং উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠা খলিস্তানপন্থী সন্ত্রাসী অর্শদীপ সিংহ গিল ওরফে অর্শ ডাল্লা গ্রেফতার হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই। প্রতিবেদন অনুসারে, গত ২৮ অক্টোবর কানাডার অন্টারিওয় গ্রেফতার করা হয়েছে অর্শ ডাল্লাকে।
কানাডার মাটিতে অর্শ ডাল্লার খলিস্তানপন্থী কার্যকলাপ নয়াদিল্লির অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছিল। খলিস্তানপন্থী সন্ত্রাসবাদী হরদীপ সিংহ নিজ্জর হত্যায় ভারত যুক্ত বলে অভিযোগ তুলেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। পাল্টা ভারতের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অঙ্কে কানাডার মাটিকে ভারত-বিরোধী খলিস্তানিদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হতে দিচ্ছে ট্রুডো সরকার। যে নিজ্জরকে নিয়ে এত বিতর্ক, ডাল্লা নিজেকে সেই নিজ্জরেরই অনুগামী বলে মনে করে থাকেন। শুধু তা-ই নয়, নিজ্জরের অবর্তমানে তাঁর তৈরি খলিস্তানপন্থী উগ্র সংগঠন খলিস্তানি টাইগার ফোর্স (কেটিএফ)-এরও দেখভাল করতেন তিনি।
খুন, হুমকি দিয়ে টাকা তোলা-সহ একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত ডাল্লা অপরাধজগতে নাম লেখান ভারতেই। তখন তিনি পঞ্জাবের মোগার বাসিন্দা। সেখানেই ছোটখাটো নানা অপরাধে হাত পাকান তিনি। তার পর ‘গ্যাংস্টার’ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০১৮ সালে কানাডায় পাড়ি দেন। সে দেশে গিয়ে নিজ্জরের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। প্রথমে নিজ্জরের সঙ্গে যৌথ ভাবে, তার পরে একাই ‘খলিস্তানপন্থী সন্ত্রাস’ চালিয়ে যান তিনি।
ভারতে একাধিক সন্ত্রাসমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে ডাল্লার বিরুদ্ধে। ভারতের তরফে তাঁকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ঘোষণাও করা হয়েছিল। তবে নাগাল পাওয়া যায়নি। ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর, কানাডায় স্ত্রীকে নিয়ে বাস করছিলেন তিনি। তাঁর গ্রেফতারির বিষয়টির উপর নজর রাখছে ভারত। এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে, সে বিষয়ে কানাডার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগও রাখা হচ্ছে বলে খবর। অর্শদীপের গ্যাং ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সন্ত্রাসমূলক কাজকর্ম করে বলেও অভিযোগ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কংগ্রেস নেতা বলজিন্দর সিংহ বাল্লি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছিলেন অর্শদীপ। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে তিনি দাবি করেছিলেন, বলজিন্দর তাঁর জীবন নষ্ট করে দিয়েছিলেন। অন্ধকার জগতে যেতে বাধ্য করেছিলেন।
তবে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) সূত্রে খবর, ভারতের আর এক ‘গ্যাংস্টার’, অধুনা জেলবন্দি লরেন্স বিশ্নোইয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েছে ডাল্লার। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এটি মূলত ক্ষমতা এবং প্রাধান্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা। বিশ্নোই গ্রেফতার হওয়ার পরেও তাঁর দলবল এখনও অপরাধজগতে সক্রিয়। মহারাষ্ট্রের এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকি হত্যাকাণ্ড, সলমন খান-কে হুমকি দেওয়া-সহ একাধিক ঘটনায় নাম জড়িয়েছে বিশ্নোই গ্যাংয়ের। ডাল্লা গ্রেফতার হওয়ার পরে তাঁর দলবলের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে কি না, তা-ও ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের।