শোকস্তব্ধ: আগুন কেড়ে নিয়েছে পরিজনকে। নিউ ইয়র্কে ব্রঙ্কস-এ। ছবি: রয়টার্স।
স্টোভ নিয়ে খেলতে গিয়ে ঘটে গেল চরম বিপর্যয়। তার জেরে নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কস-এ এক আবাসনের ভয়াবহ আগুন লেগে দুই শিশু-সহ অন্তত ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মেয়র বিল ডে ব্লাসিও বৃহস্পতিবার রাতে এই খবর দিয়ে বলেছেন, ‘‘এমন বিধ্বংসী আগুনে এত প্রাণহানি এখানে বহু বছর পরে ঘটল।’’ অগ্নিকাণ্ডে চার জন গুরুতর জখম হয়েছেন। জীবনের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তাঁরা। শুক্রবার জানা যায়, ওই আবাসনের এক তলায় একটি বাচ্চা স্টোভ নিয়ে খেলছিল। সেখান থেকেই দুর্ঘটনাবশত আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাড়িতে।
কেউ কেউ বলছেন, ১৯৯০ সালের মার্চে ব্রঙ্কস-এ একটি নাইটক্লাবে ভয়াবহ আগুনে মারা যান ৮৭ জন। তার পর এমন অগ্নিকাণ্ড চাক্ষুষ করেননি অনেকেই। এ বার ব্রঙ্কস-এর বেলমন্ট এলাকার ২৩৬৩ প্রসপেক্ট অ্যাভিনিউ বিল্ডিংয়ে বৃহস্পতিবার স্টোভ থেকে আগুন লাগে। ঘটনাস্থলেই পাঁচ জন মারা যান। হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় আরও সাত জনের। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত আরও দুই শিশু। যারা মারা গিয়েছে, তার মধ্যে এক বছরের শিশুটি মায়ের সঙ্গে উদ্ধার হয়েছে বাথটাবের ভিতর থেকে। আগুনে পুড়ে যাওয়া অনেক চেহারাই এখনও শনাক্ত হওয়া বাকি। হারিয়ে যাওয়া আর একটি শিশুকে খুঁজছে তার পরিবার। আগুনে ওই বাড়িটি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে পুরোপুরি ভিতরে ঢুকতে পারছেন না উদ্ধারকারীরা। গোটা বাড়িটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
মেয়র ডে ব্লাসিও বলেছেন, ‘‘আমরা একটা বিষণ্ণ পরিস্থিতির মধ্যে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর দিনে দুর্ঘটনাবশত মানুষ পরিবার থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন।’’ বাড়ির বাসিন্দা ম্যাথু ইগবিনেশন বলছেন, ‘‘জানলা দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম। চার দিক শুধু কালো ধোঁয়া। দরজাটা কোথায় দেখতেই পাচ্ছিলাম না।’’ ৫৯ বছর বয়সি থিয়ের্নো ডিয়ালো ঘুমিয়ে ছিলেন নিজের ঘরে। তার পর দরজায় ধাক্কার আওয়াজে তাঁর ঘুম ভাঙে। কোনওমতে বাথ-রোব গায়ে জড়িয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসেন তিনি। এক বাসিন্দা পাঁচটি শিশুকে সঙ্গে বেরিয়ে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ‘‘এই ঠান্ডায় কারও গায়ে কোট নেই, হাউহাউ করে কাঁদছে বাচ্চাগুলো।’’
উৎসব এবং ছুটির মরসুমে এমন বিপর্যয়ে মন ভারাক্রান্ত এলাকার বাসিন্দাদের। নিউ ইয়র্কে প্রবল ঠান্ডা এবং হাওয়ার মধ্যে উদ্ধারকারীদেরও কাজ করতে অসুবিধে হচ্ছে। ১৬০ জন দমকলকর্মী পরিস্থিতি সামাল দিতে নেমে পড়েন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত দশটা নাগাদ আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।