(বাঁ দিকে) খালেদা জিয়া এবং আমির শফিকুর রহমান। —ফাইল চিত্র।
নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের সম্ভাবনা উস্কে দিয়ে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে সাক্ষাৎ করলেন জামায়াতে ইসলামীর (জামাত নামেই যা পরিচিত) আমির শফিকুর রহমান এবং নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। লন্ডনে খালেদা জিয়ার পুত্র তথা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের বাড়িতে তাঁদের সাক্ষাৎ হয়। এ সময় সেখানে তারেকও উপস্থিত ছিলেন বলে প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদ জানাচ্ছে।
বৈঠক প্রসঙ্গে শফিকুর বলেন, ‘‘উনি (খালেদা) অসুস্থ। ওঁর খোঁজখবর নেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’’ প্রায় তিন আগে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল খালেদাকে। বর্তমানে সুস্থ হয়ে উঠেছেন উঠেছেন তিনি। সম্প্রতি লন্ডন থেকে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ভার্চুয়াল বক্তৃতায় খালেদা বলেন, ‘‘আগামী দিনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’’ পুরোপুরি সুস্থ হলে পুত্র তারেককে নিয়ে খালেদা বাংলাদেশে ফিরবেন বলে জল্পনা রয়েছে। এই আবহে তিনি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে ওই ভার্চুয়াল বক্তৃতায় বলেন, ‘‘সকলে মিলে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’’
সরাসরি কারও নাম না নিলেও জাতীয় সংসদের ভোট ঘোষণায় টালবাহানার জন্য মূহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে খালেদা নিশানা করেছেন বলে অনেকেই মনে করছেন। এই আবহে খালেদা- শফিকুর বৈঠককে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, মুখে ঐক্য রক্ষার কথা বলা হলেও শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে মতবিরোধ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। বিশেষত, জাতীয় সংসদের পরবর্তী নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে খালেদার দলের সঙ্গে হাসিনা জমানায় নিষিদ্ধ ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ (‘জামাত’ নামেই যা পরিচিত)-র সংঘাত কার্যত প্রকাশ্যে এসে পড়েছে।
দ্রুত জাতীয় সংসদের নির্বাচন চেয়ে বিএনপি ক্রমশ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপর চাপ বাড়াচ্ছে। অন্য দিকে, জামায়াতে নেতৃত্ব চাইছেন এ ক্ষেত্রে ইউনূসকে ‘প্রয়োজনীয় সময়’ দিতে। খালেদার পুত্র তথা দলে কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান তারেক মাস ক’য়েক আগে ভার্চুয়াল বৈঠকে বলেন, ‘‘নির্বাচনী ব্যবস্থা যদি ঠিক করতে না পারি, তবে দেশের কোনও কিছুরই সমাধান হবে না। ঝড়, তুফান, বন্যা, খরা, বৃষ্টি যা–ই হোক না কেন, একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হতেই হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। এই লক্ষ্যের পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে আমরা তাঁদের প্রতিহত করব।’’ যদিও শফিকুর সম্পূর্ণ বিপরীত মত জানিয়ে তাঁর দলের সভায় সম্প্রতি বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার তাড়াহুড়া করে নির্বাচনের আয়োজন করুক, আমরা চাই না। আমরা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দেব। অন্তর্বর্তী সরকার অনেকগুলি সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার করেই সরকার একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করবে বলে আমরা আশা করছি।’’