একটা কাঁকড়া। তার রক্তের দাম শুনলে চমকে যাবেন। এই অশ্বক্ষুরাকৃতি কাঁকড়াটির রক্তের দাম লিটার প্রতি প্রায় ১১ লক্ষ টাকা।
অশ্বক্ষুরের ন্যায় দেখতে উপবৃত্তাকার এই কাঁকড়াটি হল Horseshoe Crab' লিমিউলাস, কিন্তু এটিকে কাঁকড়া বলা হলেও প্রজাতিগত দিক থেকে মাকড়সার সঙ্গে বেশি মিল রয়েছে এটির। আর এই কাঁকড়ার নীল রক্তই বহুমূল্য।
এই রক্তের অসাধারণ ক্ষমতা বলে লিমিউলাস বা অশ্বক্ষুরাকৃতি কাঁকড়ারা যে কোনও ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং বিষাক্ত পদার্থ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। তাই চিকিৎসাবিজ্ঞানে এদের গুরুত্ব অপরিসীম।
এদের রক্তের রঙ নীল কেন? বিজ্ঞানীরা জানান, মেরুদণ্ডী প্রাণীরা সাধারণত হিমোগ্লোবিনে লোহার উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে রক্তে অক্সিজেন পরিবহণ করে থাকে। কিন্তু এদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি আলাদা।
এরা হিমোসায়ানিনের সাহায্যে অক্সিজেন পরিবহণ করে। এতে তামার উপস্থিতির কারণে রক্তের রঙ নীল হয়।
কাঁকড়ার রক্তে অ্যামিবোসাইট আছে। এই অ্যামিবোসাইটে মাত্র এক লক্ষ কোটি ভাগের এক ভাগ ব্যাকটিরিয়ার উপস্থিতিতে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। যেখানে স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে সময় লাগে ৪৮ ঘণ্টা। কী ভাবে এই অ্যামিবোসাইট তৈরি হয়, তা নিয়ে গবেষণা চলছে।
এই Limulus amebocyte lysate বা LAL ব্যবহার শুরু হয় সত্তরের দশকে। সামান্যতম ব্যাকটিরিয়ার উপস্থিতিও তাই বুঝতে পারে এটি। চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বা ভ্যাকসিনেও ব্যাকটিরিয়ার উপস্থিতি পরীক্ষায় ব্যবহার হয় এটি।
এই কাঁকড়াগুলি আসলে জীবনদায়ী। এরা নিজেরাই রক্ত দেয় বলা যায়।প্রতি বছর প্রায় ছয় লক্ষ কাঁকড়া ধরা হয় আমেরিকার সমুদ্রতট থেকে। এর মধ্যে তাদের থেকে ৩০ শতাংশ রক্ত নেওয়া হয়।
এই নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক তৈরি হয়েছে, কারণ বেশ কয়েকজন প্রাণীবিজ্ঞানী জানিয়েছেন, ১০-২০ শতাংশ কাঁকড়া এ ফলে মারা যায়। ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজার্ভেশন অব নেচার’ (আইইউসিএন) একে ‘ভালনারেবল’ বলে ঘোষণা করে ‘রেড লিস্ট’-এ রেখেছে।
আগামী ৪০ বছরে আমেরিকায় এই কাঁকড়ার সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যাবে, জানিয়েছে আইইউসিএন। শুরু হয়েছে প্রজাতি সংরক্ষণ।
বিজ্ঞানীরা একটি কৃত্রিম পদার্থ তৈরি করতে চেষ্টা করছেন যেটি LAL এর সমগোত্রীয়। কারণ এই জীবনদায়ী রক্তের সঙ্গে মানুষের জীবনও জড়িত।
প্রতি গ্রীষ্মে আমেরিকার মেক্সিকো উপসাগর থেকে এসে মূল উপসাগরীয় অঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকায় ঝাঁক বেঁধে অবস্থান করে এই কাঁকড়ার দল।
এদের জীবন্ত জীবাশ্মও বলা হয়, কারণ ৪৪ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগেও পৃথিবীতে এদের অস্তিত্ব ছিল। ডাইনোসরের চেয়েও প্রায় ২০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিল এই লিমিউলাস। তাই এই জলজ প্রাণী বিজ্ঞানীদের কাছে আজও বিস্ময়।