Lok Sabha Election 2024

নজরে শিয়া ভোট, বিদেশনীতি অস্ত্র গেরুয়া শিবিরের

মৃত্যুর সাড়ে তিন দশক পরেও কাশ্মীরের বদগাম জেলায় ইরানের শিয়া সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনি-র বড় বড় হোর্ডিং দেখা গিয়েছে। বদগামের জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ শিয়া মুসলিম।

Advertisement

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৪৩
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

নির্বাচনের আগে বার বারই ঘরোয়া রাজনীতিতে লাভ তুলতে বিদেশনীতিকে অস্ত্র করে থাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এমনটাই মনে করে রাজধানীর সংশ্লিষ্ট মহল। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সদ্যসমাপ্ত ইরান সফরের পরে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, আসন্ন লোকসভা ভোটে লখনউ, মুর্শিদাবাদ, ভোপাল, হায়দরাবাদের মতো এলাকায় আরও বেশি করে শিয়া তাস খেলার কথা ভাবছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। শুধু ইরানই নয়, সম্প্রতি ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ অনুষ্ঠানে আমদাবাদের রাস্তায় সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রেসিডেন্ট শেখ মহম্মদ বিন জ়ায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে মোদীর রোড শোয়ের বিষয়টিও এই কৌশলেরই অঙ্গ বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

জয়শঙ্করের ইরান সফর সেরে দিল্লি ফেরার পরদিনই তেহরান ক্ষেপণাস্ত্র হানার মাধ্যমে পাকিস্তানের জঙ্গি শিবির উড়িয়ে দেয়। এই বিষয়টিও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ দ্রুত ইরানের পাশে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে বিদেশ মন্ত্রক। পাকিস্তানের প্রত্যাঘাতের পরে যদি বিষয়টি এই অঞ্চলে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধপরিস্থিতির আকার না-নেয়, তা হলে নয়াদিল্লির তরফ থেকে চেষ্টা থাকবে ইরান কূটনীতিকে লোকসভার আগে আরও সক্রিয় করার।

রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, মৃত্যুর সাড়ে তিন দশক পরেও কাশ্মীরের বদগাম জেলায় ইরানের শিয়া সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনি-র বড় বড় হোর্ডিং দেখা গিয়েছে। বদগামের জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ শিয়া মুসলিম। যে অংশটি উনিশের লোকসভা ভোটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফারুক আবদুল্লার শ্রীনগর লোকসভা আসন (বদগাম যার অন্তর্ভুক্ত) থেকে জয়ের পিছনে শিয়া সম্প্রদায়ের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, আগামী ভোটের আগে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ ইব্রাহিম রইসি-র করমর্দনের পোস্টার কাশ্মীরের শিয়া অধ্যুষিত এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে। একই ভাবে মুর্শিদাবাদ, লখনউ, হায়দরাবাদেও ইরান তাস খেলবে বিজেপি, এমনটাই জানাচ্ছে সূত্র। বিশেষত লখনউয়ে, যেখানে শিয়ারা হাত উপুড় করে ভোট দিয়ে লোকসভায় পাঁচ বার জিতিয়েছেন অটলবিহারী বাজপেয়ীকে, গত দু’বার রাজনাথ সিংহকে।

Advertisement

সাম্প্রতিক ইতিহাস বলছে, ’৯৬ সালের লোকসভা ভোটের এক বছর আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও তৎকালীন ইরানি প্রেসিডেন্ট আলি আকবর হাশেমি রাফসানজানিকে লখনউ নিয়ে গিয়েছিলেন। লখনউয়ের বড়া ইমামবড়ায় বিশাল শিয়া জনগোষ্ঠীর সামনে তিনি বক্তৃতা দিয়ে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশংসা করেছিলেন। সূত্রের মতে, বিশ্বের শিয়া রাজনৈতিক কেন্দ্রের (ইরান) নেতৃত্বের সঙ্গে জয়শঙ্করের সংযোগের কয়েক দিন আগেই সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমদাবাদে রোড শো করাটা তাৎপর্যপূর্ণ। হাজার হাজার মুসলিম (বিশেষত বোহরা মুসলিম) একটি বিশেষ টুপি পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছিলেন তাঁদের। গুজরাতে তো নয়ই, গোটা দেশে এত মুসলিমকে রাস্তায় নেমে মোদীর সভাকে অভিনন্দিত করতে আগে দেখা যায়নি। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, ২০০২ সালের গোধরা কাণ্ডের পরে কোনও ইসলামি রাষ্ট্রের নেতাও গুজরাতে সভা করেননি।

এ কথাও খেয়াল রাখা হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশের শিয়া সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের প্রায় এক দশকব্যাপী যিনি চেয়ারম্যান সেই ওয়াসিম রিজ়ভি, রামমন্দির নির্মাণের জন্য টাকা দিয়েছেন। ২০১৭ সালে যখন লোকসভায় তিন তালাক বিল পাশ করা হয়, তখন অনেকেই অভিযোগ তুলেছিলেন, এই আইনটি সাধারণ অপরাধকে ফৌজদারি অপরাধে পরিণত করল। সেই অভিযোগ উড়িয়ে রিজ়ভি উল্টে অপরাধীর তিন বছরের শাস্তি বাড়িয়ে ১০ বছরের করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement