এ ভাবেই ইরানের মেয়েরা রাস্তায় নেমেছিলেন রক্ষণশীল মনোভাবের প্রতিবাদ জানাতে। নীতিপুলিশির প্রতিবাদ জানাতে। ফাইল ছবি।
মেয়েদের নিয়ে ইরানের প্রশাসনের গোঁড়া মানসিকতার বিরুদ্ধে বড় জয় পেলেন ইরানের মহিলারা। চলতি আন্দোলনের পর্বে এই প্রথম।
সরকারের বেঁধে দেওয়া পোশাকবিধির বিরুদ্ধে গত দু’মাস ধরেই আন্দোলন চালাচ্ছিলেন ইরানের মেয়েরা। পথে নেমে হিজাব ছিঁড়ে ফেলে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন হাজার হাজার ইরানি মহিলা। মেয়েদের উপর প্রশাসনের নীতিপুলিশির বিরুদ্ধে চলছিল একটানা আন্দোলন। রবিবার জানা গেল, এই আন্দোলনের সামনে হার মেনেছে ইরান সরকার। রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিয়ে নীতিপুলিশ বাহিনীকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে তারা।
ইরানের সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ মারফত প্রকাশ্যে এসেছে খবরটি। ইরানের কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ জাফর মন্তেজারি নিজেই ওই সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, ওই নীতিপুলিশ কোনও দিনই ইরানের কেন্দ্রীয় বিচারব্যবস্থার অন্তর্গত ছিল না। ইরান সরকার ওই নীতিপুলিশ বাহিনী ‘গস্ত-এ-এরশাদ’কে সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
ঘটনার শুরু গত ১৬ সেপ্টেম্বর। পোশাকবিধি না মানায় ইরানের রাজধানী তেহরানে এক তরুণী— মাহাসা আমিনিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের এই নীতিপুলিশের দল। হেফাজতে থাকাকালীনই মৃত্যু হয় সেই তরুণীর। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই আগুনের গতিতে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে ইরানের পথে। মেয়েরা পথে নামেন প্রশাসনের এই নীতিপুলিশির বিরুদ্ধে। হিজাব বিরোধী তীব্র আন্দোলন শুরু হয় ইরানে। যাতে সমর্থন জানান বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ মহিলা-পুরুষ, এমনকি খ্যাতনামীরাও। অবশেষে চাপের মুখে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হল ইরানের প্রশাসন।
‘গস্ত-এ-এরশাদ’-এর আক্ষরিক অর্থ হল ‘পথপ্রদর্শক বাহিনী’। এই বাহিনী নিজেদের যাত্রা শুরু করে ২০০৬ সাল থেকে। ইরানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই নীতিপুলিশ বাহিনীর। প্রকাশ্যেই জানানো হয়েছিল, এই বাহিনীর লক্ষ্য হবে ইরানে হিজাব সংস্কৃতি যথাযথ ভাবে পালিত হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা। মেয়েদের ‘শালীনতা’র পাঠ দেওয়া। অর্থাৎ, ইরানের প্রশাসনের বক্তব্য অনুযায়ী, বিচারব্যবস্থার অন্তর্গত না হলেও দেশের সরকারের প্রধানের হাতেই এর সৃষ্টি। যা এত দিন ধরে বজায় রেখে এসেছে সরকার।
বস্তুত, সেই নীতিপুলিশিরই শিকার হন ইরানের তরুণী আমিনি। ইরানের ‘পোশাকবিধি’ না মানায় উচিত শিক্ষা দিতেই গস্ত-এ-এরশাদের বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে লক আপে বন্দি করেছিল। পরে হেফাজতে থাকাকালীন তাঁর মৃত্যু হলে অভিযোগ ওঠে ইরানের নীতিপুলিশ বাহিনীর দিকেই। ধরে নেওয়া হয়, পোশাকবিধি না মানার শাস্তি দিতে অমানুষিক অত্যাচার করা হয়েছিল আমিনির উপর, যার জেরেই মৃত্যু হয় তাঁর। অন্যান্য বন্দিরাও জানিয়েছিলেন, আমিনির উপর অত্যাচার করা হয়েছিল। এই ঘটনারই প্রতিবাদে মাহাসার ছবি নিয়ে একযোগে পথে নামেন ইরানের মেয়েরা। গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে টানা চলছিল আন্দোলন। যার ফল অবশেষে হাতে পেলেন ইরানের মহিলারা। ১৬ বছর পর থেমে গেল গস্ত-এ-এরশাদের যাত্রা।